চ্গল্পপ ঞ্পান্

ললন্লীত্ভুষ্বাঞ্থ শপল্কুল্্র

বিশ্বভারতী গ্রন্থালয় ২১০ নং কর্ণওয়ালিস্‌ স্ট্রীট, কলিকাতি।

বিশ্বভারতী শ্রন্থালয় ২১০ নং কর্ণওগ়ালিস্‌ ট্রাট, কলিকাত। প্রকাশক-_শ্রীকিশোরীমোহন সাতরা

জ্গল্ল গঞ্জান্ডা

প্রথম সংস্করণ ,.. অগ্রহায়ণ, ১৩৪১ সাল।

চর

মূল্য--১।০ ১॥০

শান্তিনিকেতন প্রেস শান্তিনিকেতন, (বীরভূম )। প্রভাতকুমার মুখোপাধায় কর্তৃক মুক্রিত।

চার অধ্যায়

মানুষটি অনায়াসে ্বীকার করে নিতেন, মনে বা মুখে নালিশ করতেন ন!। বিষয়বুদ্ধির ত্রুটি রন 8৭ কখনো তিনি ক্ষমা পাননি, খেটবে ভিডি নালিশের কারণ তত্র ডু গার সী কর্ষনো? ভুলতে পারতেন না, যখ্ম:িখঠ। তীক্ষ খোচায় হয দিয়ে তার দাহকে রদ পুত দেওয়। রা সুর তুলতেন। বিশ্বাসপরায়ণ, '৪ঁদ কির পকে কেবলি ঠকৃতে ছুঃখ পেতে সাকেইা্িদ পব এলার ছিল সদাব্যথিত স্েহ-যেমন সকরুণ ন্েহ মায়ের থাকে অবুঝ বালকের 'পরে। সব চেয়ে তাকে আঘাত করত যখন মায়ের কলহের ভাষায় তীব্র ইঙ্গিত থাকত যে, বুদ্ধি বিবেচনায় তিনি তীর স্বামীর চেয়ে শ্রেষ্ট। এলা নানা উপলক্ষে মায়ের কাছে তার বাবার অসম্মান দেখতে পেয়েছে,ত] নিয়ে নি্ষল আক্রোশে চোখের জলে রাত্রে তার বালিশ গেছে ভিজে রকম 'অতিমাত্র ধৈর্ঘা অন্যায় ব'লে এল অনেক সময় তার বাবাকে মনে মনে অপরাধী না করে থাকতে পারেনি অত্যন্ত পীড়িত হয়ে একদিন এলা বাবাকে বলেছিল, “এ রকম অন্যায় চুপ ক'রে সহা করাই

অন্যায় |”

| | চার অধ্যায়

নারেশ বললেন, *ম্বভাবের প্রতিবাদ কুরাও যা আর তণ্ত লোহায় হাত বুলিয়ে তাকে ঠান্ডা করতে যাওয়াও তাই, তাতে বীরত্ব থাকতে পারে কিন্তু আরাম নেই।”

“চুপ ক'রে থাকাতে আরাম আরো কম”-ব'লে এলা দ্রুত চলে গেল |

এদিকে সংসারে এল। দেখতে পায়, যারা মায়ের মন জুগিয়ে চল্বার কৌশল জানে তাদের চক্রান্তে নিষ্ঠুর অন্ায় ঘটে অপরাধহীনের প্রতি এলা সইতে পারে না, উত্তেজিত হয়ে সত্য প্রমাণ উপস্থিত করে বিচারকর্রীর সামনে কিন্ত কর্তৃত্বের অহমিকার কাছে অকাট্য যুক্তি ছুঃসহ স্পর্ধা। অনুকূল ঝোড়ো হাওয়ার মতো তাতে বিচারের ন্ক্রো এগিয়ে দেয় না, নৌকো দেয় কাৎ ক'রে। ্‌ *গ এই পরিবারে আবো একটি উপসর্গ ছিল যা এলার মনকে নিয়ত আঘাত করেছে। সে তার মায়ের শুচিবাধু। একদিন কোনো মুসলমান অভ্যাগতকে বস্বার জন্যে এল! মাছুর পেতে দিয়েছিল,_-সে মাছুর মা ফেলে দিলেন, গাল্চে দিলে দোষ হোতো না। এলার তার্কিক মন, তর্ক না করে থাকৃতে পারে না। বাবাকে একদিন জিন্ঞাসা কর্লে, “আচ্ছা এই সব

চার অধ্যায়

ছোয়া-ছু'য়ি নাওয়া খাওয়ী নিয়ে কটুকেনা মেয়েদেরি কেন এত পেয়ে বসে? এতে হৃদয়ের তো স্থান নেই, বরং বিরুদ্ধত আছে ; তো কেবল যন্ত্রের মতো অন্ধ- ভাবে মেনে চলা” সাইকলজিস্ট্‌ বাবা বল্লেন, “মেয়েদের হাজার বছরের হাতকড়ি-লাগানো মন ; তার! মানবে, প্রশ্ন কর্বে না__এইটেতেই সমাজ-মনিবের কাছে বকৃশিষ পেয়েছে, সেইজন্যে মানাটা যত বেশি অন্ধ হয় তার দাম তাদের কাছে তত বড়ো হয়ে ওঠে। মেয়েলি পুরুষদেরও এই দশ11” আচারের নিরর৫থকতা সম্বন্ধে এল বারবার মাকে প্রশ্ন না করে থাকৃতে পারেনি, বারবার তার উত্তর পেয়েছে ভর্থসনায়। নিয়ত এই ধার্য এলার মন অবাধ্যতার দিকে ঝুঁকে পড়েছে

নরেশ দেখলেন পারিবারিক এই সব.দ্বন্দে মেয়ে শরীর খারাপ হয়ে উঠছে, সেটা তাকে অত্যান্তঠবাজল। এমন সময় একদিন এলা “একট বিশেষ অবিচারে কঠোরভাবে আহত হয়ে নরেশের কাছে এসে জানালো-“বাবা, আমাকে কলকাতায় বোডিঙে পাঠাও ।৮ প্রস্তাবটা তাদের ছুজনের পক্ষেই ছুঃখকর, কিন্ত বাপ অবস্থা বুঝলেন, এবং মায়াময়ীর দিক্‌ থেকে

" চার অধ্যায়

প্রতিকৃৎ বঞ্ধাঘ'তের মধ্যেও এলাকে পাঠিয়ে দিলেন দুরে। আপন নিষ্করণ সংসারে নিমগ্ন হয়ে রইলেন অধ্যয়ন অধ্যাপনায়।

মা বললেন, “সহরে পাঠিয়ে মেয়েকে মেমসাহেব বানাতে চাও তো বানাও কিন্তু তোমার আছুরে মেয়েকে প্রাণানত ভুগতে হবে শ্বশুরঘর করবার দিনে তখন আমাকে দোষ দিয়ো না 1৮ মেয়ের বাবারে কলিকাল্লোচিত স্বাতন্ত্রোর ছুর্লক্ষণ দেখে এই আশঙ্কা তার ম| বারবার প্রকাশ করেছেন এলা৷ তার ভাবী শাশুড়ির হাড় জালাতন করবে সেই সম্ভাবনা নিশ্চিত জেনে সেই কাল্পনিক গৃহিণীর প্রতি তার অনুকম্পা মুখর হয়ে উঠত। এর-€থকে মেয়ের মনে ধারণ! দৃঢ় হয়েছিল যে, বিয়ের জন্যে মেয়েদের প্রস্তুত ভোতে হয় ক্বাত্সসম্মীনকে পঙ্গু করে, হ্যায়অন্যায়বোধকে অসাড় করে দিয়। ,

এলা৷ যখন ম্যাট্রিক পার হয়ে কলেজে প্রবেশ করেছে তখন মায়ের মৃত্যু হোলো নরেশ মাঝে মাঝে বিয়ের প্রস্তাবে মেয়েকে রাজি কর্তে চেষ্টা করেছেন। এল। অপৃব্ধ সুন্দরী, পাত্রের তরফে প্রার্থী; অভাব ছিল না, কিন্তু বিবাহের প্রতি বিমুখতা তার

. চার অধ্যায়,

সংস্কারগত। মেয়ে পরীক্ষাগুলো পাস করলে, তাকে অবিবাহিত রেখেই বাপ গেলেন মারা |

সুরেশ ছিল তার কনিষ্ঠ ভাই। নরেশ এই ভাইকে মানুষ করেছেন, শেষ পর্যন্ত পড়িয়েছেন খরচ দিয়ে। ছুবছরের মতো তাকে বিলেতে পাঠিয়ে স্ত্রীর কাছে. লাঞ্ছিত এবং মহাজনের কাছে" খণী হয়েছেন। স্বরেশে এখন ডাকবিভাগের উচ্চপদস্থ কন্মচারী। কর্মউপলক্ষ্যে ঘুরতে হয় নানা প্রদেশে তারই, উপর পড়ল এলার ভার। একান্ত যত্ব করেই ভার নিলেন।

শ্ররেশের স্ত্রীর নাম মাধবী। তিনি যে-পরিবারের মেয়ে সে-পরিবারে স্ত্রীলোকদের পরিমিত পড়া-শুনোই ছিল প্রচলিত; তার পরিমাণ মাঝারি মাপের চেয়ে কম বই বেশি নয়। স্বামী বিলেত থেকে ফিরে এসে উচ্চপদ নিয়ে দূরে দূরে যখন ঘুরতেন তখন তাঁকে বাইরের নানা লোকের সঙ্গে সামাজিকতা করতে হোতো। কিছুদিন অভ্যাসের পরে মাধবী নিমন্ত্রণ আমন্ত্রণে বিজাতীয় লৌকিকতা পালন করতে অভ্যস্ত হয়েছিলেন। এমন কি, গোরাদের ক্লাবেও পঙ্গু ইংরেজি ভাষাকে সকারণ অকারণ হাসির দ্বারা পুরণ করে কাজ চালিয়ে আসতে

পারতেন

* চার অধ্যায়

এমন সময় সুরেশ কোনো প্রদেশের বড়ো সহরে বখন আছেন এলা এলো তার ঘরে; রূপে গুণে বিষ্ভায় কাকার মনে গর্ব ' জাগিয়ে তুললে। ওর উপরিওয়ালা বা সহকম্টী এবং দেশী বিলিতি আলাগী পরিচিতদের কাছে নানা উপলক্ষ্যে এলাকে প্রকাশিত করবার জন্যে তিনি ব্যগ্র, হয়ে উঠলেন। এলার স্ত্রীবুদ্ধিতে বুঝতে বাকি রইল না যে, এর ফল ভালে। হচ্চে না মাধবী মিথ্যা আরামের ভান ক'রে ক্ষণে ক্ষণে বলতে লাগলেন, “বাচা গেল-- বিলিতি কায়দার সামাজিকতার দায় আমার ঘাড়ে চাপানো কেন বাপু! আমার না আছে বিছ্বে, না আছে বুদ্ধি।” ভাবগতিক দেখে এলা নিজের চারিদিকে প্রায় একটা জেনান! খাড়া করে 'তুললে। স্থরেশের মেয়ে ম্বরমার পড়াবার ভার সে অতিরিক্ত উৎসাহের সঙ্গে নিলে। একট। থীসিস, লিখতে লাগিয়ে দিলে তার বাকি সময়টুকু। বিষয়টা! বাংল। সঙ্গলকাব্য চসারের কাব্যের তুলনা এই নিয়ে স্থুরেশ মহা উৎসাহিত। এই সংবাদট। চারদিকে প্রচার করে দ্রিলেন। মাধবী মুখ বাকা করে বললেন, “বাড়াবাড়ি !”

স্বামীকে বললেন, এলার কাছে ফস করে

জা

চার অধ্যায়

মেয়েকে পড়তে দ্রিলে! কেন, অধর মাষ্টার কী দোষ করেছে? যাই বলোনা আমি কিন্তু-_”

স্থবরেশ অবাক হয়ে বললেন, “কী বলো তুমি! এলার সঙ্গে অধরের তুলনা !”

“ছুটো নোট বই মুখস্থ করে পাস করলেই বিচ্ভে হয় ন1,৮-বলে ঘাড় বেঁকিয়ে গৃহিণী ঘর থেকে বেরিয়ে চলে গেলেন

একট! কথা স্বামীকে বলতেও তার মুখে বাঁধে “ম্থরমার বয়স তেরে পেরোতে চল্ল, আজ বাদে কাল পাত্র খুঁজতে দেশ ঝেটিয়ে বেড়াতে .হবে, তখন এলা। স্বরমার কাছে থাকলে_ছেলেগুলোর চোখে যে ফ্যাকাসে কটা রডের নেশা__ওর! কি জানে কাকে বলে স্রন্দর?” দীর্ঘনিশ্বাস ফেলেন 'আর ভাবেন,__-এ সব কথা৷ কর্তাকে জানিয়ে ফল নেই, পুরুষরা যে সংসার-কাণা |

যত শীঘ্র হয় এলার বিয়ে হয়ে যাক এই চেষ্টায় উঠে পড় লাগলেন গৃহিণী ৰেশি চেষ্ট। করতে হয় না, ভালো ভালো পাত্র আপনি এসে জোটে_-এমন সব পাত্র, সুরমার সঙ্গে যাদের সম্বন্ধ ঘটাবার জন্য মাধবী লুন্ধ হয়ে ওঠেন। অথচ এলা তাদের বারে বারে নিরাশ ক'রে ফিরিয়ে দেয়।

2 চার অধ্যায়

ভাইঝির একগু'য়ে অবিবেচনায় উদ্বিগ্ন হলেন স্থরেশ, কাকী হলেন অত্যন্ত অসহিষুণ। তিনি জানেন সংপাত্রকে উপেক্ষ। করা সমর্থ বয়সের বাঙালী মেয়ের পক্ষে অপরাধ। নানারকম বয়সোচিত ছুধ্যোগের আশঙ্কা করতে লাগলেন, এবং দায়িত্ববোধে অভিভূত হোলো তার অন্তরকরণ। এলা স্পষ্টই বুঝতে পারলে যে সে তার কাকার স্নেহের সঙ্গে কাকার সংসারের দ্বন্ব ঘটাতে বাসছে।

এমন সময়ে ইন্দ্রনাথ এল্লেন সেই সহরে দেশের ছাত্রের! তাকে মান্ত রাজচক্রবন্তীর মতো। অসাধারণ তার তেজ, আর বিদ্যার খ্যাতিও প্রভূত। একদিন স্বরেশের ওখানে তার নিমন্ত্রণ। সেদিন কোনো এক স্থযোগে এলা অপরিচয়সত্তবেও অসস্কোচে তার কাছে (এসে বললে, “আমাকে আপনার কোনো একট কাজ দিতে (শারেন না?”

আজকালকার দিপ্ধে রকম আবেদন বিশেষ "আশ্চর্যের নয় কিন্তু তবু মেয়েটির দীপ্তি দেখে চমক 'লাগ্ল ইন্দ্রনাথের | তিনি বল্লেন, “কলকাতায় সম্প্রতি নারায়ণী হাইস্কুল মেয়েদের জন্যে খোল] ত'জছে। তোমাকে তার কত্রীপদ দিতে পারি, প্রস্তুত আছ ?”

চার অধ্যায় ১৯

«প্রস্তুত আছি যদি আমাকে বিশ্বাস করেন।”

ইন্দ্রনাথ এলার মুখের দিকে তার উজ্জ্বল দৃষ্টি রেখে বল্লেন, “আমি লোক চিনি। তোমাকে বিশ্বাস করতে আমার মুহূর্তকাল বিলম্ব হয়নি। তোমাকে. দেখবানাত্রই মনে হয়েছে, তুমি নবযুগের দৃতী, নবযুগের আহ্বান তোমার মধ্যে।”

হঠাৎ ইন্দ্রনাথের মুখে এমন কথা শুনে এলার বুকের মধ্যে কেঁপে উঠ্‌ল।

সে বললে, “আপনার কথায় আমার ভয় হয়। ভুল ক*রে আমাকে বাড়াবেন না। আপনার ধারণার যোগ্য হবার জন্যে ছুঃসাধ্য চেষ্টা করতে গেলে ভেঙে পড়ব। আমার শক্তির" সীমার মধ্যে যতটা পারি বাঁচিয়ে চল্ব আপনার আদর্শ, কিন্তু ভান করতে পারব না1”

ইন্দ্রনাথ বল্লেন, “সংসারের বন্ধনে কোনোদিন বদ্ধ হবে না এই প্রতিজ্ঞা তোমাকে স্বীকার কর?ত হবে। তুমি সমাজের নও তুমি দেশোর |”

এলা মাথা তুলে বল্‌্লে, “এই প্রতিজ্ঞাই আমার |”

কাকা গমনোগ্ঠিত এলাকে বল্লেন “তোকে আর কোনোদিন বিয়ের কথা বল্ব না। তুই আম্মার কাছেই থাক্‌। এখানেই পাড়ার মেয়েদের পড়াবার

১২ চার অধ্যায়

ভার নিয়ে একটা ছোটোখাটে! ক্লাস খুললে দোষ কী!” কাকী স্লেহার্ স্বামীর অবিবেচনায় বিরক্ত হয়ে বল্লেন,“ওর বয়স হয়েছে, নিজের দায় নিজেই নিতে চায়, সে ভালোই তো। তুমি কেন বাধা দিতে যাও মাঃবর থেকে [তুমি যাই মনে করোনা কেন,আমি বলে রাখছি ওর ভাবনা আমি ভাবতে পার্ব না1”

এলা খুব জোর করেই বল্লে-“আমি কাজ পেয়েছি, কাজ করতেই যাব”

এল কাজ করতেই গেল।

এই ভূমিকার পরে পাঁচ বছর উত্তীর্ণ হোলো, এখন কাহিনী আনেক দুর অগ্রসর হয়েছে।

এথম্ম ভঙ্্যাশ্সি

দশ্য-চায়ের দোকান। তারি এক পাশে একটি ছোটো ঘর। সেই ঘরে বিক্রির জন্যে সাজানো কিছু ফ্ুল-কালেজপাঠ্য বই, অনেকগুলিই সেকেগুহ্যাণড। কিছু, আছে যুরোগীয় আধুনিক গল্প নাটকের ইংরেজি তঙ্জমা। সেগুলো অল্পবিত্ত ছেলেরা পাত উল্টিয়ে পড়ে চলে যায়, দোকানদার আপত্তি করে না। স্বত্বাধিকারী কানাই গুপ্ত, পুলিনের পেন্সনভোগী সাবেক সাব্ইন্স্পেক্টর

সামনে সদর রাস্তা, বা পাশ দিয়ে গেছে গলি। যারা নিভৃতে চা খেতে চায় তাদের জন্যে ঘরের এক অংশ ছিন্নপ্রায় চটের পর্দা দিয়ে ভাগ করা। আজ সেইদিকটাতে একটা বিশেষ আয়োজনের লক্ষণ যথেষ্ট পরিমাণ টুল চৌকির অসপ্ভাব পুরণ করেছে দাজ্জিলিং চা কোম্পানির মার্কা-মারা প্যাকিবাক্স। চায়ের পাত্রেও অগত্যা বৈসাদৃশ্য, তাদের কতকগুলি নীলরঙের এনা- মেলের, কতকগুলি সাদা চীনামাটির। টেবিলে হাতল- ভাড়া দুধের জগে ফুলের তোড়।। বেল! প্রায় তিনটে ছেলেরা এলালতাকে নিমন্ত্রণের সময় নির্দেশ কারে

১৪ চার অধ্যায়

দিয়েছিল ঠিক আড়াইটায়। বলেছিল এক মিনিট পিছিয়ে এলে চল্‌বে না। অসময়ে নিমন্ত্রণ, যেহেতু সময়টাতে দোকান শ্বন্ত থাকে। চা-পিপাস্থুর ভিড় লাগে সাড়ে চারটার পর থেকে এলা ঠিক সময়েই উপস্থিত। কোথাও ছেলেদের একজনেরও দেখা নেই একলা বসে তা ভাবছিল--তবে কি শুনতে তারিখের ভূল হয়েছে! এমন সময় ইন্দ্রনাথকে ঘরে ঢুকৃতে দেখে চমকে উঠ্ল। জায়গায় তাকে কোনোমতেই আশা করা যায় না।

ইন্দ্রনাথ যুরোপে কাটিয়েছেন অনেকদিন, বিশেষ খাতি পেয়েছেন সায়ান্সে। যথেষ্ট উচুপদে প্রবেশের অধিকার তার ছিল ;যুরোগীয় অধ্যাপকদের প্রশংসাপত্র ছিল উদার ভাষায়। ফুরোপে থাকতে ভারতীয় কোনো একজন পোলিটিক্যাল্‌ বদ্নামীর সঙ্গে তার কদাচিৎ।দেখ। গাক্ষাৎ হয়েছিল, দেশে ফিরে এলে তারি লাঞ্চনা তাকে সকল কম্মে বাধা দিতে লাগল। অবশেষে ইংলগের খ্যাতনাম। কোনো বিজ্ঞান-আচাধ্যের বিশেষ স্ুপারিসে অধ্যাপনার কাজ পেয়েছিলেন, কিন্ত . সে-কাজ অযোগ্য অধিনায়কের অধীনে অযোন,তার সঙ্গে ঈধ্যা থাকে গ্রথর, তাই ভার বৈজ্ঞানিক গবেষণার

প্‌

চার অধ্যায় * ১৫

চেষ্টা উপরওয়ালার হাত থেকে ব্যাঘাত পেতে লাগল পদে পদে। শেষে এমন জায়গায় তাকে বদলি হোতে হোলো যেখানে ল্যাবরেটরি নেই। বুঝতে পারলেন এদেশে তার জীবনে সর্ববোচ্চ অধ্যবসায়ের পথ অবরুদ্ধ। একই প্রদক্ষিণপথে অধ্যাপনার চিরাভ্যস্ত চাকা ঘুরিয়ে অবশেষে কিঞ্চিৎ পেন্সন ভোগ ক'রে জীবলীল! সম্বরণ করবেন, নিজের এই দুর্গতির আশঙ্কা তিনি কিছুতেই স্বীকার করতে পারলেন না। তিনি নিশ্চিত জামতেন অন্য যে-কোনো দেশে সম্মানলাভের শক্তি তার প্রচুর ছিল। |

একদা ইন্দ্রনাথ জানম্মান ফরাসী ভাষা শেখাবার একটা প্রাইভেট ক্লাস খুললেন, (সই সঙ্গে ভার নিলেন বটানি জিয়লজিতে কলেজের ছাত্রদের সাহায্য করবার ক্রমে এই কষ অনুষ্ঠানের গোপন তলদেশ বেয়ে একটা অপ্রকাম্ঠ সাধনার জটিল শিকড় জেল- খানার প্রাঙ্গণের মাঝখান দিযে ছড়িয়ে পড়ল বহুদূরে

ইন্দ্রনাথ জিজ্ঞাস করলেন,“এলা, তুমি যে এখানে ?”

এলা বল্লে, “আপনি আমার বাড়িতে ওদের যাওয়া, নিষেধ করেছেন সেইজন্যে ছেলেরা এখানেই. আমাকে ডেকেছে ।”

১৬ | | চার অধ্যায়

“মে খবর আগেই পেয়েছি পেয়েই জরুর তাদের অন্থাত্র কাজে লাগিয়ে দিলুম। ওদের সকলের হয়ে এপলজি করতে এসেছি বিলও শোধ করে দেব।”

“কেন আপনি আমার নিমন্ত্রণ ভেঙে দিলেন 1”

“ছেলেদের সঙ্গে তোমার সহৃদয়তার সম্পর্ক আছে সেই কথাটা চাপা দেবার জন্যে কাল দেখতে পাবে তোমার নাম ক'রে একটা প্রবন্ধ কাগজে পাঠিয়ে দিয়েছি |”

“আপনি লিখেছেন? আপনার কলমে বেনামী চলে না; লোকে ওটাকে অকৃত্রিম বলে বিশ্বাস করবে না” |

“বা হাত দিয়ে কীচা ক'রে লেখা; বুদ্ধির পরিচয় নেই, সছ্‌পদেশ আছে।”

“কী রকম ?”

“তুমি লিখছ,_ছেলেরা অকালবোধনে দেশকে মারতে বসেছে বঙ্গনারীদের কাছে তোমার সকরুণ

আপিল এই যে, তারা যেন লক্ষ্মীছাড়াদের মাথা ঠাণ্ডা করে। বলেছ,_দুর থেকে ভর্সনা কর্লে কানে পৌহছবে না। ওদের মাঝখানে গিয়ে পড়তে হবে, বখাদনে ওদের নেশার আড্ডা। শাসনকর্তাদের সন্দেহ হোতে

চার অধ্যায় ১৭

পারে, তা হোকৃ। বলেছ, তোমরা মায়ের জাত; ওদের শাস্তি নিজে নিয়েও যদি ওদের বাঁচাতে পারো, মরণ সার্থক হবে আজকাল সর্বদাই বলে থাকো-_ তোমরা মায়ের জাত, কথাটাকে লবণা্বুত্ে ভিজিয়ে লেখার মধ্যে বসিয়ে দিয়েছি মাতৃবৎসল পাঠকের চোখে জল আসবে। যদি তুমি পুরুষ হোতে, এর পরে রায় বাহাছুর পদবী পাওয়া অসম্ভব 'হোতে। না।” “আপনি যা লিখেছেন সেট। যে একেবারেই আমার কথ। হোতে পারে না তা আমি বল্ব না এই সর্ব্ব- নেশে ছেলেগুলোকে আমি ভালোবাসি-_অমন ছেলে আছে কোথায়! একদিন ওদের সঙ্গে কলেজে পড়েছি প্রথম প্রথম ওরা আমার নামে বোর্ডে লিখেছে যাঁ- তা,--পিছন থেকে ছোটো এলাচ ব'লে টেঁচিয়ে ডেকেই ভালোমানুষের মতে! আকাশের দিকে তাক্িয়েছে। ফোর্থইয়ারে পড়ত আমারধবন্ধু ইন্দ্রাণী--তাকে বল্ত বড়ো এলাচ, সে বেচারার বহরে কিছু বাহুল্য ছিল, রউটাও উজ্জ্বল ছিল নাঁ। এই সব ছোটোখাটো। উৎপাত নিয়ে অনেক মেয়ে রাগারাগি করত, আমি কিন্ত ছেলেদের পক্ষ নিয়েছি। আমি জানতুম, আমর!

১৮ চার অধ্যায়

ওদের চোখে অনভ্যন্ত তাই ওদের ব্যবহারটা হয়ে পড়ে এলামেলো-কদধ্যও হয় কখনো কখনো, কিন্তু সেটা ওদের স্বাভাবিক নয়। যখন অভ্যেস হয়ে গেল, স্বরআপনি এল সহজ হয়ে। ছোটো এলাচ হোলো এলা-দি। মাঝে মাঝে কারো স্বরে মধুর রস লেগেছে __ কেনই বা লাগবে না? আমি কখনো ভয় করিনি তা নিয়ে। আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি ছেলেদের সঙ্গে ব্যবহার করা খুবই সহজ, মেয়ের! জ্ঞাত বাঁ অজ্ঞাতসারে যদি ওদের মুগয়! করবার দিকে ঝোক না দেয়। তার পরে একে একে দেখলুম ওদের মধ্যে সব চেয়ে ভালো যারা, যাদের ইতরতা নেই, মেয়েদের "পরে সম্মান, যাদের পুরুষের যোগ্য-”

“অর্থাৎ কলকাতার রসিক ছেলেদের মতো যাদের. রস গাজিয়ে-ওঠা নয়--”

“ই তারাই, ছুটুল মৃত্যুদূতের পিছন পিছন মরীয়া হয়ে, তারা প্রায় সবাই আমারই মতো বাঙাল ওরাই যদি মর্তে ছোটে আমি চাইনে ঘরের কোণে বেচে থাকতে কিন্তু দেখুন মাষ্টারমশায়, সত্যি কথা বল্ব। যতই দিন যাচ্চে, আমাদের উদ্দেশ্যট। উদ্দেশ্য নাহয়ে নেশা হয়ে উঠছে। আমাদের কাজের পদ্ধতি

চার অধ্যায় | ১৯

চলেছে যেন নিজের বেতাল। ঝৌঁকে বিচারশক্তির বাইরে ভালো লাগছে না। অমন সব ছেলেদের কোন্‌ অন্ধশক্তির কাছে বলি দেওয়! হচ্চে! আমার বুক ফেটে যায়।”

“বসে, এই যে ধিকার এটাই »ক্লুরুক্ষেত্রের উপক্রমণিকা অজ্জ্বনের মনেও ক্ষোভ জেগেছিল। ডাক্তারি শেখবার গোড়ায় মড়া কাটবার সময় ঘৃণায় প্রায় মুচ্ছা গিয়েছিলুম | ঘ্ৃণাটাই দ্বৃণ্য। শক্তির গোড়ায় নিষ্ঠুরের সাধনা, শেষে হয়তো ক্ষমা। তোমরা বগলে থাকো- মেয়েরা মায়ের জাত, কথাটা গৌরবের নয়। মা তো প্রকৃতির হাতে স্বতই বানানো জন্ত জানোয়াররাও বাদ যায় না। তার চেয়ে বড়ো কথা তোমরা শক্তিরূপিণী, এইটেকেই প্রমাণ করতে হবে দয়া-মায়ার জলা-জমি পেরিয়ে গিয়ে শক্ত ডাঙায়। শক্তি দাও, পুরুষকে শক্তি দাও ।”

“এ সব মস্ত কথা বগল আপনি ভোলাচ্চেন আমাদের। আমরা আসলে যা, তার চেয়ে দাবী করছেন অনেক বেশি এতট! সইবে না |

“দাবীর জোরেই দাবী সত্য হয়। তোমাদের আমর যা বিশ্বাম করতে থাকব তোমরা তাই হয়ে

| | চার অধ্যায়

উঠবে। তোমরাও তেমনি ক'রে আমাদের বিশ্বাস করো যা্ত*আমাদের সাধনা সত্য হয় /পপ্্আ! 'কথা কওয়াতে ভালোবাসি কিন্তু এখন সেনয়। আঙ্ি নিজ কিছু বল্তে ইচ্ছে করি |” ২. আচ্ছা তা হোলে এখানে নয়, চলে! পিছনের

রি

পম.

)

ঘরটাতে।” দি. .

'পর্দাটানা 1 আধ! অন্ধকার ঘরে গেল ওরা সেখানে একখানা পুরোনো” টেবিল, তার 'ছুধারে ছুখানা বেঞ্চ, দেয়ালে একটা বড়ো সাইজের ভারতবর্ষের ম্যাপ

“আপনি একটা অন্যায় করছেন_-একথা না বলে থাকতে পারলুম না।”

ইন্দ্রনাথকে এমন, ক'রে বল্তে একমাত্র এলাই পারে। তবু তার পক্ষেও বল! সহজ নয়, তাই, অস্বাভাবিক জোর লাগ্ল গলায়

ইন্দ্রনাকে ভালো দেখতে বল্লে সবটা বলা হয় না। ওর চেহারায় আছে একট। কঠিন আকর্ষণ-শক্তি। যেন একটা বজ্র বাধা আছে সুদুরে ওর অন্তরে, তার গর্জন কানে আসে না, তার নিষ্ঠুর দীপ্তি মাঝে মাঝে ছুটে বেরিয়ে পড়ে। মুখের ভাবে মাজা-ঘম, ভদ্রতা, শান-দেওয়া ছুরির মতো। কড়া কথা বল্‌তে বাধে

চার অধ্যায় ২১

না কিন্তু হেসে বলে; গলার সুর রাগের বে এু্ছিডে না, রাগ প্রকাশ পায় হাসিতে যড়টধু পারছি মর্যাদা রক্ষা হয় ততটুকু কানা

তীক্ষতা, ঠোটে অবিচলিত সংকল্প এবং প্রতৃদ্বে গৌরব | অত্যন্ত, ছুঃসাধ্য রকমের দাবী সে অনায়াসে করতে পারে, জানে সেই দাবী সহজে অগ্রাহ্য হবে না। কেউ জানে তার বুদ্ধি অসামান্য, কেউ জানে তার" শক্তি অলৌকিক। তার ”পরে কারে। আছে সীমাহীন শ্রদ্ধা, কারো আছে অকারণ ভয়।

ইন্দ্রনাথ হাসিমুখে বল্লে, “কী অন্যায় ?”

“আপনি উমাকে বিয়ে করতে হুকুম করেছেন, সে তে বিয়ে করতে চায় না।*

“কে বল্‌্লে, চায় না?”

“সে নিজেই বলে ।”

“হয়তো সে নিজে ঠিক জানে না, কিম্বা নিজে ঠিক বলে না।”

২২ | চার অধ্যায়

“সে আপনার সামনে প্রতিজ্ঞা করেছিল বিয়ে করবে না।” | |

“তখন সেটা ছিল সত্য, এখন সেটা সত্য নেই। মুখের কথায় সত্য স্থষ্টি করা যায় না। প্রতিজ্ঞা উমা আপনিই ভাঙ্ত, আমি ভাঙালুম, ওর অপরাধ বাচিয়ে দিলুম 1”

প্রতিজ্ঞা রাখা না রাখার দায়িত্ব ওরই, না হয় ভাঙ্তঃ না হয় করত অপরাধ 1”

“ভাঙ্তে ভাঙ্তে আশেপাশে ভাঙসুর করত বিস্তর, লোকসান হোতে। আমাদের সকলেরই 1”

«ও কিন্তু বড়ো কান্নাকাটি করছে 1”

“তাহোলে কান্নাকাটির দিন আর বাড়তে দেব নী কাল পরশুর মধ্যেই বিয়ে চুকিয়ে দেওয়া যাবে |”

“কালু পরশুর পরেও তো ওর সমস্ত জীবনটাই আছে” |

“মেয়েদের বিয়ের আগেকার কান্না প্রভাতে মেঘ- ডন্বরং |”

“আপনি নিষ্ঠুর!”

“কেন না, মানুষকে যে-বিধাতা ভালোবাসেন তিনি নিষ্ঠুর, জন্তকেই তিনি প্রশ্রয় দেন।”

চার অধ্যায় ২৩£

“আপনি জানেন উমা সুকুমারকে ভালোবাসে

“সেই জন্যেই ওকে তফাৎ কুরতে চাই ।”

“ভালোবাসার শাস্তি? £

“ভালোবাসার শাস্তির কোনো মানে নেই। তা হোলে বসন্ত রোগ হয়েছে বলেও শাস্তি দিতে হয়। কিন্তু' গুটি বেরোলে ঘর থেকে বের ক'রে রোগীকে হাসপাতালে পাঠানোই শ্রেয়

“ঝুকুমারের সঙ্গে বিয়ে দিলেই তো হয়।” *

পন্থুকুমার তো। কোনো অপরাধ করেনি ওর মতো ছেলে আমাদের মধো ক-জন আছে ?/৮

“ও যদি নিজেই উমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়?”

“অসম্ভব নয়। দেই জন্যেই এত তাড়া ওর মতো উচুদরের পুরুষের মনে বিভ্রম ঘটানো মেয়েদের পক্ষে সহজ ;*_সৌজন্যকে প্রশ্রয় বলে স্ুকুমারের কাছে প্রমাণ কর! ছুই এক ফৌটা চোখের জলেই সম্ভব হোতে পারে। রাগ করুছ শুনে

“রাগ কর্ব কেন? মেয়েরা নিঃশব নৈপুণ্যে প্রশ্রয় ঘটিয়েছে আর তার দায় মানতে হয়েছে পুরুষকে, আমার অভিজ্ঞতায় এমন ঘটনার অভাব, নেই। “সময় হয়েছে সত্যের অন্ারোধে ন্যায় বিচার করবার আমি

২৪ * চার অধ্যায়

সেটা ক'রে থাকি ঝলেই মেয়েরা আমাকে দেখ্তে পারে

না। যার সঙ্গে উমার বিয়ের হুকুম মেই. ভোগীলালের

মত কী | “সেই নিষ্কণটক ভালোমানুষের মতামত বলে কোনো উপসর্গ নেই। বাঙালীর মেয়েমাত্রকেই সে বিধাতার অপূর্ব স্থটি ব'লে জানে। ও-রকম মুগ্ধ স্বভাবের ছেলেকে দলের বাইরের আঙিনায় সরিশে ফেলা দরকার জঞ্জাল ফেঁলবার সব চেয়ে ভালো ঝুড়ি বিবাহ |”

“এই সমস্ত উৎপাতের আশঙ্কা সাত্বও আপনি মেয়ে পুরুষকে একত্র করেছেন কেন 1”

“শরীরটাতে ছাই দিয়েছে যে-সন্নাসী, আর প্ররৃভিকে ছাই করেছে যে-ভশ্কুণড দেই ক্লীবদের নিয়ে কাজ হবে না ঝলে। যখন দেখব আমাদের দলের কোনো অগ্নিউপাক অসাবধানে নিজের মধ্যেই অগ্নিকাণ্ড, করতে বসেছে দেব তাদের সরিয়ে। আমাদের অগ্নিকাণ্ড দেশ জড়, নেবানো মন দিয়ে তা হবে না, আর হবে না তাদের দিয়ে-__আগুন যার চাপ্‌তে জানে না।”

গন্তীর মুখে এলা বসে রইল। কিছুক্ষণ বাদে চোখ নামিয়ে বললে, “আমারে আপনি তাবে ছেড়ে দিন্‌।”

চার অধ্যায় | | ২৫.

. “এতখানি ক্ষতি কর্তে বলো কেন 1”,

“আপনি জানেন না ১5.

''জানিনে কে বল্লে? দেখা গেল একদিন তোমার খব্দরে একটুখানি রং লেগেছে | জানা গেল অন্তরে অরুণোদয়। বুঝাত পারি একট! কোন্‌ পায়ের শব্দের" প্রত্যাশায় তোমার কান পাতা থাকে। গেল শুক্রবারে যখন এলুম তোমার ঘরে, তুমি ভেবেছিলে আর কেউ-বা। দেখলুম মনটা ঠিক করে নিতে কিছু সময় লাগল। লজ্জা কোরো না তুমি, এতে অসঙ্গত কিছুই নেই

কর্ণমূল লাল করে চুপ করে রইল এলা

ইন্দ্রনাথ বল্লে, “তুমি একজনকে ভালোবেসেছ, এই তো? তোমার মন ্ো জড় পাষাণে গড়া নয় যাকে ভালোবাসো তাকেও জানি। অন্থুশোচনার কারণ কিছুই দেখছি নে 1”

“আপনি বলেছিলেন এমন! হয়ে কাজ কর্‌তে হবে। সকল অবস্থায় তা সম্ভব না হোতে পারে।”

“সকলের পক্ষে নয়। কিন্তু ভালোবাসার খুরু- ভারে তোমার ব্রত ডোবাতে পারে ভূমি তেমন মেয়ে নও |”

২৬ . | চার অধ্যায়

সি

“কিন্ত”

“এর মধ্যে কিন্ত কিছুই নেই-তুমি কিছুতেই নিষ্কৃতি পাবে না”

“আমি তো আপনাদের কোনো কাজে লাগিনে, সে আপনি জানেন ।”

“তোমার কাছ থেকে কাজ চাইনে, কাজের. কথা সব জানাইওনে তোমাকে কেমন ক'রে তুমি নিজে বুঝবে তোমার হাতের রক্তচন্দনের ফোটা ছেলেদের মনে কী আগুন জ্বালিয়ে দেয়। সেটুকু বাদ দিয়ে কেবল শুখে মাইনেয় কাজ করাতে গেলে পুরে! কাজ পাব না আমর! কামিনীকাঞ্চনত্যাগী নই যেখানে কাঞ্চনের প্রভাব সেখানে কীঞ্চনকে অবজ্ঞা করিনে, যেখানে কামিনীর প্রভাব সেখানে কামিনীকে বেদীতে বসিয়েছি।” |

“অবপনার কাছে মিথ্যে বল্ব না, বুঝতে পার্ছি আমার ভালোবাস! দিনে দিনেই আমার অন্য সকল ভালোবাসাকে ছাড়িয়ে যাচ্চে ।৮

“কোনো ভয় নেই, ধু ভালোবাসো শুধু মামা স্বরে দেশকে যারা ডাকাডাকি করে, তারা চিরশিশু। দেশ বৃদ্ধ শিশুদের, মা নয়, দেশ অর্ধনারীশ্বর-_মেয়ে

চার 'অধায় ২৭

পুরুষের মিলনে তার উপলব্ধি। এই মিলনকে নিস্তেজ কোরো না সংসার-পি'জ্রেয় বেঁধে”

“কিন্ত তবে আপনি যে উমা”

“উমা! কালু !-ভালোবাসার শুফ রুদ্ররপ ওরা সইতে পার্বে কী করে? যে দাম্পত্যের ঘাটে ওদের সকল সাধনার আল্ট্যেষ্টি সকার, সময় থাকৃতে সেখানেই দুজনকে গঙ্গাযাত্রায় পাঠাচ্চি।__সে কথা থাক। শোনা গেল তোমার ঘরে ডাকাত ঢুকেছিল পর রাত্রে ।”

" “হাঁ, ঢুকেছিল |”

“তোমার জুজুতনু শিক্ষায় ফল পেয়েছিলে কি?”

“আমার বিশ্বাস ডাকাতের কনজি দিয়েছি ভেঙে

“মনটার ভিতর আহা উন ক'রে ওঠেনি টু”

“কর্ত কিন্ত ভয় ছিল আমাকে অপমান করবে যদি যন্ত্রণায় হার মানত আমি শেষ পর্যন্ত মোচং দিতে পার্তুম না।”

“চিন্তে পেরেছিলে ছেঁকে?”

“অন্ধকারে দেখতে পাইনি 1”

“যদি পেতে তা হোলে জানতে, মে অনাদি 1৮

“আহা সে কী কথ!! আমাদের অনাদি! ( যে ছেলেমানুষ 1?

১৮২৮ | চার অধ্যায়

“আমিই তাকে পাঠিয়েছিলুম |”

“আপনিই! কেন এমন কাজ করলেন ?”

“তোমারো পরীক্ষা হোলে!, তারো 1”

“কী নিষ্ঠুর!”

“ছিলুম নীচের ঘরে, তখনি হাড় ঠিক করে দিয়েছি) তুমি নিজেকে মনে করো ব্যথাকাতর। বোঝাতে, চেয়েছিলুম বিপদের মুখে কাতরতা স্বাভাবিক নয়। সেদিন তোমাকে বল্লুম, ছাগল ছানাটাকে পিস্তল ক'রে মার্তে। তুমি বল্লে, কিছুতেই পার্বে না। তোমার পিস্তুত বোন বাহাছুরী ক'রে মার্লে গাল। যখন দেখলে জন্তট। পা ভেঙে পড়ে গেল, কাঠিন্তের ভান ক'রে হাহা ক'রে হেসে উঠল। হিস্টারিয়ার হাসি, সেদিন রাত্তিরে তার ঘুম হয়নি। কিন্তু তোমাকে যদি বাধে খেতে আস্ত আর তুমি যদি ভীতু না হোতে তা হোলে' তখনি তাকে মার্তে, দ্বিধা কর্তে ন1। আমরা সেই বাঘটাকে মনের সামূনে স্পষ্ট দেখ্ছি, দয়ামায়া দিয়েছি বিসজ্জন, নইলে নিজেকে সেন্টিমেপ্টাল বলে ঘ্বণা কর্তুম। শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে এই কথাটাই বুঝিয়েছিলেন। নির্দয় হবে না কিন্তু কর্তৃব্যের বেল! নিম্মম হোতে হবে। বুঝতে পেরেছ ?”

চার অধ্যায় * | ্‌ ২৯/

“পেরেছি |”

“যদি বুঝে থাকো একটা প্রশ্ন কর্ব। তুমি অতীনকে ভালোবানো ?”

কোনো উত্তর না দিয়ে এলা চুপ করে রইল। “যদি কখনো সে আমাদের সকলকে বিপদে ফেলে, তাকে. নিজের হাতে মার্তে পারো না ?”

“তারপক্ষে এতই অসম্তব যে হা বল্তে আমার মুখে বাধ বে না1৮

“্যদিই সম্ভব হয় ?”

“মুখে যা-ই বলি না কেন, নিজেকে কি শেষ পধ্যন্ত জানি +”

“জানতেই হবে নিজেকে সমস্ত নিদারুণ সম্ভাবন। প্রত্যহ কল্পনা ক'রে নিজেকে প্রস্তত রাখতে হবে ।”

“আমি নিশ্চিত বল্ছি, আপনি আমাকে ভুল করে বেছে নিয়েছেন।”

“আমি নিশ্চিত জানি আমি ভূল করিনি ।”

“মাষ্টারমশায়, আপনার পায়ে পড়ি, দিন্‌ অতীনকে নিষ্কৃতি ।” ্‌

“আমি নিষ্কৃতি দেবার কেট বাঁধা পড়েছে নিজেরই সঙ্কল্পের বন্ধনে। ওর মন থেকে দ্বিধা কোনো

১, ৮. | ". চার অধ্যায়

কালেই মিট্‌বে না, রুচিতে ঘা লাগবে প্রতিমূহূর্তে, তবু ওর আত্মসম্মান ওকে শিয়ে যাবে শেষ পর্যন্ত

“লোক চিন্তে আপনি কি কখনে। ভুল করেন না ?”

“করি। অনেক মানুষ আছে যাদের স্বভাবে ছু- রকম বুনোনির কাজ। ছুটোর মধ্যে মিল নেই। অথচ ঢুটোই সত্য তারা নিজেকেও নিজে ভূল করে 1”

ভারী গলায় আওয়াজ এলো) “কী হে ভায়া |”

“কানাই বুঝি? এসো এসো |”

কানাইগপ্ত এলো ঘরে। বেঁটে মোটা মানুষটি আধবুড়ো। সপ্তাহখানেক দাড়ি গৌোফ কামাবার অবকাশ ছিল না, কণ্টকিত হায় £উঠেছে মুখমণ্ডল। সামনের মাথায় টাক; ধুতির উপর মোটা খদ্দরের চাদর, ধোবার প্রসাদ-বঞ্চিত, জামা নেই হাত ছুটো দেহের পরিমাণে খাটো, মনে তয়, সর্বদা কাজে উদ্যত, দলের ভোকের যথাসম্তব অন্নসংস্থানের জন্যই কানাইয়ের চায়ের দোকান।

কানাই তার স্বাভাবিক চাপা ভাড়া গলায় বল্লে, “ভায়া, তোমার খ্যাতি আছে বাকৃসংযমে, তুমি মুনি বল্লেই হয়। এলাদি তোমার সেই খ্যাতি বুঝি দিলে মাটি ক'রে”

চার অধায় * | ৩১

ঈন্দ্রনাথ হেমঘে বল্লে, “কথা না৷ বলারই সাধন

আমাদের। নিয়মটাকে রক্ষা করবার জন্যেই ব্যতি- ক্রমের দরকার। এই মেয়েটি নিজে কথা বলে না, অন্যাকে কথা বলবার ফাক দেয়, বাক্যের 'পরে একটি বহুমূল্য আতিথ্য ।”

“কী বলো তুমি ভায়া! এলাদি কথা বলে না! তোমার কাছে চুপ, কিন্তু যেখানে মুখ খোলে সেখানে বাণীর বন্তা। আমি তো মাথাপাকা মানুষ, 'সাড়া। পেলেই খাতাপত্র ফেলে আড়াল থেকে ওর কথা শুন্তে, আসি। এখন আমার প্রতি একটু মনোযোগ দিতে হবে। এলাদির মতো! কণ্ঠ নয় আমার, কিন্তু সংক্ষেপে যেটুকু বল্ব তা মন্মে প্রবেশ কর্বে 1”

এলা৷ তাড়াতাড়ি উঠে পড়ল। ইন্দ্রনাথ বল্‌্লে-_ “যাবার আগে একটা কথা তোমাকে জানিয়ে রাখি দলের লোকের কাছে আমি তোমাকে নিন্রে ক'রে থাকি এমন কি, এমন কথ?ও বলেছি, যে, একদিন, ভোমাকে হয় তে। একেবারে নিশ্চিহ্ন সরিয়ে দিতে হবে। বলেছি, অতীনকে তুমি ভাঙিয়ে নিচ্চ, সেই ভাঙনে আরো কিছু ভাঙবে ।”

“বল্‌তে বল্‌্তে কথাটাকে সত্য ক'রে তুল্ছেন কেন ?

কী জানি, এখানকার সঙ্গে হয় তো আমার একটা অসামপ্রস্ত আছে ।”

“থাকা সত্বেও তোমাকে সন্দেহ করিনে। কিন্তু তবু ওদের কাছে তোমার নিন্দে করি। তোমার শক্র কেউ নেই এই জনপ্রবাদ, কিন্তু দেখতে পাই তোমার বারো আনা অনুরক্তের বাংলাদেশী মন নিন্দা বিশ্বাস করবার আগ্রহে লালায়িত হয়ে ওঠে এই নিন্দাবিলাসীরা নিষ্ঠাহীন। এদের নাম খাতায় টুক রাখি। আনেক- গুলো পাতা ভর্তি হোলো!”

“মাষ্টারমশায়। ওরা নিন্দে ভালোবাসে বলেই নিন্দে করে, আমার উপর রাগ আছে ব'লে নয় 1৮

“অজাতশত্ত নাম শুনেছে এলা। এরা সবাই জাতশক্র। জন্মকাল থেকেই এদের অহৈতুক শক্রুত! বাংলাদেশের অভুথানের সমস্ত চেষ্টাকে কেবলি ধুলিসা কর্ছে।”

“ভায়া, আজ এই পপধ্যন্ত, বিষয়টা আগামীবারে সমাপ্য। এলাদি, তোমার চায়ের নিমদ্ত্রণ ভাউবার মূলে যদি গোপনে আমি থাকি, কিছু মনে কোরো নং আমার চায়ের দোকানটাতে কুলুপ পড়বার সময় আসন্ন। কোধ “হয় মাইল শো তিন তফাতে গিয়ে

চার অধ্যায় ৩৩

এবার নাপিতের দোকান খুলতে হবে। ইতিমধ্যে অলকানন্দা তৈল পাঁচ পিপে তৈরি করে রেখেছি। মহাদেবের জটা নিংড়ে 'বের করা একটা সার্টিফিকেট দিয়ো বসে, বোলো-অলকা তেল মাখার পর থেকে চুল-বাধা একটা আপদ হয়েছে, দীর্ঘায়মানা বেণী সামলে তোলা স্বয়ং দশতুজ' দেবীর ছুঃসাধ্য।

যাবার সময় এল দরজার কাছে এসে মুখ ফিরিয়ে বল্লে,_মাষ্টারমশায়, মনে রইল আপনার কথা, প্রস্তুত থাকৃব। আমাকে সরাবার দিন হয়তো আস্বে, নিঃশবেই মিলিয়ে যাব ।”

এল] চলে গেলে ইন্দ্রনাথ বল্লে, “তোমাকে চঞ্চল দেখছি কেন হে, কানাই ?”

“সম্প্রতি রাস্তার ধারে আমার সামনের টেবিলেই বসে গোটাতিনেক গু ছেলে বীররস প্রচার কর্ছিল। আওয়াজে বোঝা যায় জন্‌ বৃষভের্ই পুষ্বে বাছুর। আমি দিডিশনের লমুনা সুদ্ধ ওদের নামে পুলিসে রিপোর্ট করে দিয়েছি।”

“আন্দাজ করতে তুল করোনি তে! কানাই 1”

, “ব্রং ভূল ক'রে সন্দেহ করা ভালো, কিন্তু সন্দেহ নাকরে হল করা সাংঘাতিক খাঁটি বোকাই যদি

৩৪

চার অধ্যায়

হয় তাহোলে কেউ ওদের কাচাতে পারবে না, আর যদি হয় খাটি ছুষ মন্‌ তাহোলে ওদের মারবে কে? আমার রিপোর্টে উন্নতিই হবে। সেপ্দিন চড়া গলায় সয়তানি শাসনপ্রণালীর উপর দিয়ে রক্তগঞ্গ৷ বওয়াবার প্রস্তাব তুলেছিল। নিশ্চয়ই অভয়চরণ রক্ষিত এদের উপাধি। একদিন সন্ধ্যাবেলায় ক্যাশ বাঝ নিয়ে হিসেব মেলাতে বসেছিলুম। হঠাৎ একটা ধুলোমাখা ছেঁড়াকাপড়-পরা ছেঝে এসে চুপি চুপি বল্লে, টাকা চাই পঁচিশটা, যেতে হবে দিনাজপুরে আমাদের মথুর মামার নাম করলে আমি লাফ দিয়ে উঠে চীৎকার ক'রে বলে উঠলুম, সয়তান, এত বড়ো আম্পর্ধা তোমার ! এখনি ধরিয়ে দেব পুলিসের হাতে ।-সময় হাতে একটুও ছিল না, নইলে প্রহসনটা শেষ করতুম, নিয়ে যেতুম থানায়। তোমার ছেলেরা যার পাশের ঘরে বসে চা খাচ্ছিল তারা আমার উপর অন্নিশর্্া ; ওকে দেবে বলে চাদ! তোলবুার চেষ্টা করতে *গিয়ে দেখলে, সবার পকেট কুড়িয়ে তেরো আনার বেশি ফণ্ড উঠল না। ছেলেটা! আমার মুত্তি দেখে সরে পড়েছে ।”

. দিবে তো দেখছি তোমার ঢাকৃনির ফুটে! দিয়ে গন্ধ বেরিয়ে পড়েছে-__মাছির আমদানি সুরু হোলো”

চার অধ্যায় | ৩৫

“সন্দেহ নেই। ভায়া, এখনি ছড়িয়ে ফেলো তোমার ছেলেগুলোকে দূরে দূরে-_ওদের একজনও যেন বেকার না থাকে 09581811019 10.08178 01 115611)00 প্রত্যেকেরই থাক] চাই ।”

“চাই নিশ্চয়ই | কিন্তু উপায় ঠাউরেছ ?”

“আনেকদিন থেকে হাত খোলস! ছিল না, নিজে করতে পারিনি ভেবে রেখেছি, উপকরণও জমিয়েছি ধীরে ধীরে। মাধব কবিরাজ বিক্রি করে জুনরাঁশনি 'বটিকা, তার বারো আনা কুইনীন্। সেগুলো তার কাছ থেকে নিয়ে লেবেল্‌ বদলে নাম দেব ম্যালেরিয়ারি গুটিকা, কুইনীনের পিছনে অনেকখানি মিথ্যে কথ! জুড়তে হবে। প্রতুল সেনকে লাগানো যাবে ক্যান্থিশের ব্যাগ হাতে গুটিকা প্রচার করার কাজে। তোমার নিবারণ ফঞ্টক্রাস এম্‌, এস্‌, সি, লজ্জা ত্যাগ ক'রে পড়,কু ভৈরবী কবচ নিয়ে, এই কবচে সপ্তধাতুর উপরে নব্য রসায়নের আরো 'গোটা-কতক নৃতন ধাতুর নাম জড়িয়ে প্রাচীন খধষিদের সঙ্গে আধুনিক বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব সম্মিলন সাধন করা যেতে পারে। জগবন্ধু স্কৃত শ্লোকের উপর ব্যাকরণের ভেল্কি লাগিয়ে, উচ্চস্বরে প্রমাণ কুরতে থারধুষ্টি যে, চাণকা জন্মেছিলেন

$ ৩৬ " চার অধ্যায়

বাংলাদেশে নেত্রকোণায়, আমারও স্থান সাবডিবিশনে। এই নিয়ে সাংঘাতিক কথা কাটাকাটি চলুক্‌ সাহিত্যে, অবশেষে চাণক্য-জয়ন্তী করা যাবে আমারি প্রপিতামহের পেংড়ে৷ ভিটের 'পরে। তোমা" দের ক্যান্বেলি ডাক্তার তারিণী সাণ্ডেল মা শীতলার মন্দির নির্মাণের জন্যে টাদা চেয়ে পাড়া আস্বর-ক'রে বেড়াক্‌। আসল কথা হচ্চে, তোমার সবচেয়ে মাথা- উঁচু গ্রেনেডিয়ার ছেলের দলকে কিছুদিন বাজে ব্যবসায়ে ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে--কেউবা ওদের বোকা বলুক, কেউ বা বলুক ওরা চতুর বিষয়ী লোক ।”

ইন্দ্রনাথ হেসে বল্লে, “তোমার কথা শুনে আমার ইচ্ছে হচ্চে একটা ব্যবসায়ে লাগি আর কিছুর জন্যে না, কেবল *দেউলে হবার কাধ্য-প্রণালী এবং সাই- কোলজি অনুশীলন করবার জন্যে 1”

কামাই বল্লে, “তুমি যে-ব্যবসায়ে লেগেছ ভায়া, সেটা আজ হোক্‌ বা ফাল হোক্‌ নিশ্চিত দেউলে হবারই মুখে আছে। যার! দেউলে হয় তারা বোঝে না লে হয় তা নয়, তারা লোকসানের রাস্তা কোনে মতে ছাড়তে পারে না বলেই হয়--দেউলে হওয়ার মরণটান একটা সারাইম আকর্ষণ | বিষয়টা বর্তমানে

চার অধ্যায় * রী

আলোচনা ক'রে ফল নেই ; একটা প্রশ্ন মনে আচ্ছ সেটা তোমাকে জিজ্ঞাসা কুরে নিই। এলার মতো সুন্দরী সর্বদ1 দেখতে পাওয়া যায় না--এ কথা মানেো। কি ন। ?”

“মানি বই কী ।৮

“তা হোলে ওকে তোমাদের মধ্যে রেখেছ কোন্‌ সাহসে ?”

“কানাই, এতদিনে আমাকে তোমার বোঝা উচিত ছিল। আগুনকে যে ভয় করে সে আগুনকে “ব্যবহার করতে পারে না। আমার কাজে আমি আগুনকে বাদ দ্রিতে চাইনে |”

“তর্থাৎ তাতে কাজ নষ্ট হোক্‌ বা না হোক্‌_-তুমি কেয়ার করো না1%

“হ্থপ্টিকর্তী আগুন নিয়ে খেলা করে। নিশ্চিত ফলের হিসেব ক'রে স্থ্টির কাজ চলে না; অনিশ্চিতের প্রত্যাশাতেই তার বিরাট প্রবর্তন ঠাণ্ডা! মীলমসল! নিয়ে বুড়ো আঙ্লে টিপে টিপে যে পুতুল গড়া হয় তার বাজারদর খতিয়ে লোভ করবার মন আমার নয়। এঁ যে অতীন ছেলেটা এসেছে এলার টানে. ওর মধ্যে বিপদ ঘটাবার ডাইনামাইটু আছে,-ওর প্রতি তাই আমার এত ওংস্ত্রকা |”

৩৮ | চার অধ্যায়

“ভায়া, তোমার এই ভীষণ ল্যাবরেটরিতে আমরা ঝাড়ন কাধে বেহারার কাজ করি, মাত্র ক্ষেপে ওঠে যদি কোনো গাস্‌, যদি কোনো যন্ত্র ফেটে ফুটে ছিটকে

পড়ে তাহোলে আমাদের কপাল ভাঙবে সাতখানা হয়ে! সেটা নিয়ে গর্ব করবার মতো জোর আমাদের খুলির তলায় নেই ।” *,

“জবাব দিয়ে বিদায় নেও না কেন ?”

“ফ্ুলর লোভ যে আছে আমাদের, তোমার না থাকতে পারে। তোমারি দালালদের মুখে একদা শুনেছিলুম 101 91 11 হয়তো মিলতে পারে। তোমার এই সর্বনেশে রিসঙ্চের চক্রান্তে গরীব আমরা ধরা দিয়েছি নিশ্চিত আশীরই টানে, অনিশ্চিতের কৃহকে নয়। তুমি এটাকে দেখছ জুয়োখেলার দিক থেকে, আমরা দেখছি ব্যবসার সাদা চোখে অবশেষে খতেনের খাতায় আগুন লাগিয়ে আমাদের সঙ্গে ঠাট্রা কোরো না, ভায়া ওর প্রত্যেক শিকি পয়সায় আছে আমার্দের বুকের রক্ত

“আমার মনে কোনো অন্ধ বিশ্বাস নেই কানাই হার-জিতের কথা ভাবা একেবারে ছেড়ে দিয়েছি। প্রকাণ্ড কর্মের ক্ষেত্রে আমি কর্তা, এইখানেই আমাকে

চার অধ্যায়... ৩৯

মানায় বলেই আমি আছি,-এখানে হারও বড়ো জিতও বড়ো। ওর! চারদিকের দরজা বন্ধ ক'রে আমাকে ছোটে করতে চেয়েছিল, মরতে মরতে প্রমাণ করতে চাই আমি বড়ো। আমার ডাক শুনে কত মানুষের মতো মানুষ মৃত্যুকে অবজ্ঞা ক'রে চারিদিকে এসে জুটল; মে তো তুমি দেখতে পাচ্চ কানাই। কেন? আমি ডাকতে পারি ঝলেই। সেই কথাটা ভালো করে জেনে এবং জানিয়ে যাব, নর পরে যাহয়হোক। তোমাকে তো বাইরে থেকে একদিন দেখতে ছিল সামান্য কিন্তু তোমার অসামান্কে আমি প্রকাশিত করেছি। রসিয়ে তুল্লুম তোমাদের, মানুষ নিযে এই আমার রসায়নের ,সাধনা। আর বেশি কী চাই? এতিহাসিক মহাকাব্যের সমাপ্তি হোতে পারে পরাজয়ের মহাশ্বশানে। কিন্তু মহাকাব্য তো বটে ! গোলামি-চাপা এই খবর মনুষ্যত্বের দেশে মরাঁর মতো মরতে পারাও যে একটা সুযোগ

“ভায়া, আমার মতো অকাল্পনিক প্র্যাকৃটিক্যাল লোককেও তুমি টান মেরে এনেছ ঘোরতর পাগ্লামির তাণ্ডব নৃত্যমঞ্চে ভাবি যখন, রহস্তের অন্তু পাইনে আমি 1”

চা

৪০ | | চার অধ্যায়

«আমি কাঙালেব মতো ক'রে কিছুই চাইনে বলেই তোমাদের পরে আমার এত জোর। মায়া দিয়ে ভুলিয়ে লোভ দেখিয়ে ডাকি নে কাউকে ডাক দিই অসাধ্যের মধ্যে, ফলের জন্বে নয়, বীর্য প্রমাণের জন্যে | আমার স্বভাবট! ইম্পার্সোন্যাল্‌। যা অনিবাধ্য তাকে আমি অক্ষুব্ধমনে স্বীকার করে নিতে পারি। ইতিহাস তো পড়েছি, দেখেছি কত মহা মহা সাম্রাজ্য গৌরবের অভ্রভেদী শিখরে উঠেছিল আজ তারা ধুলোয় মিলিয়ে গেছেতাদের হিসাবের খাতায় কোথায় মস্ত একটা দেনা জমে উঠেছিল যা তারা শোধ করেনি আর এই দেশ যেহেতু আমারি দেশ, সৌভাগ্যের চির স্বত্ব নিয়ে ইত্তিহাসের উচু গদীতে গদিয়ান হয়ে বসে থাকবে পরাভবের সমস্ত কারণগুলোর গায়ে সিদূর চন্দন মাখিয়ে ঘণ্টা নেড়ে" পুজো করতে করতে, বোকার মতো এমন আবদার কর্ব কার কাছে? আমিতা কখনোই করিনে। বৈজ্ঞানিকের নিন্মোহ মন নিয়ে মেনে নিই যার মরণদশা। সে মরবে ।৮

“তবে !”

“তবে! দেশের চরম দুরবস্থা আমার মাথা হেট করতে পারবে নী, আমি তারো অনেক উদ্ধে-

চার অধ্যায় " | ৪১.

আত্মার অবসাদ ঘটতে দেব না মরবার সমস্ত লক্ষণ দেখেও ।৮

“আর আমর। !”

“তোমরা কি খোকা! মাঝদরিয়ায় যে-জাহাজের' তলা গিয়েছে সাত জায়গায় ফাক হয়ে, কেদে কেটে মন্ত্র প”ড়ে কর্তার দোহাই পেড়ে তাকে বাচাতে পারবে ?

“না যদি পারি তবে ?”

“তবে কী! তোমরা ক-জনে জেনে শুনে সেই | ডুবো জাহাজেই ঝড়ের মুখে সাংঘাতিক পাল তুলে দিয়েছ, তোমাদের পাঁজর কাপেনি। এমন যে-ক'জনকে পাই ডুবতে ডুবতে তাদের নিয়েই আমাদের জিৎ।. রসাতলে যাবার জন্যে যে-দেশ অন্ধভাবে প্রস্তত তারি মাস্ত্রলে তোমরা শেষ পধ্যন্ত জয়ধ্বজ। উড়িয়েছ, তোমরা ন! করেছ মিথ্যে আশা, না করেছ কাড়ালপনা, না' কেঁদেছ নৈরান্যে হাউ হাউ ক'রে তোমর৷ 'তবু হাল ছাড়োনি যখন জলে ভরেছে জাহাজের খোল। হাল ছাড়াতেই কাপুরুষতা-_বাস্, আমার কাজ হয়ে গেছে তোমাদের যে-ক'জনকে পেয়েছি তাদেরই নিয়ে। তার পরে? কন্মগ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন ।”

চার অধ্যায়

“তুমি যা বল্ছ তার মধ্যে থেকে একটা প্রধান কথা বাদ গেছে বলে বোধ হয়”,

“কোন্‌ কথাটা ?”

«তোমার মনে কি রাগও নেই ? এত ইম্পার্সোনল ভুমি 1”

“রাগ কার "পরে ?”

“ইংরেজের পরে |”

“যে, জোয়ান মদ খেয়ে চোখ লাল না করলে লড়তে পারেই না, সেই গ্রাম্যকে আমি অবজ্ঞা করি। রাগের মাথায় কর্তব্য করতে গেলে অকর্তব্য করার সম্তাবনাই বেশি |”

“তা হোকৃ, কিন্তু রাগের কারণ থাকলে রাগ না করাটা অমানবিক 1” |

“সমস্ত যুরোপের সঙ্গে আমার পরিচয় আছে, আমি ইংরেজকেও জানি যত পশ্চিমী জাত আছে তার মধ্যে ওরা সব চেয়ে বড়ো জাত। রিপুর তাড়ায় ওরা যে মারতে পারে না তা নয় কিন্তু পুরোপুরি পারে না লঙ্জ পায়। ওদের নিজেদের মধ্যে যারা বড়ো তাদেরই কাছে জবাবদিহি করতে ওদের সব চেয়ে ভয়; _-ওরা নিজেকে ভোলায় তাদেরও ভোলায়। ওদের

চার অধ্যায় | ৪৩ *

উপরে যতটা রাগ করলে ফুল্প্রীম বানিয়ে তোলা যায় ততটা রাগ আমার দ্বারা সন্তব হয় না ।”

“অদ্ভুত তৃমি।”

“ষোলো আনা মারের চোটে আমাদের মেরুদণ্ড ওরা চিরকালের মতো গুড়িয়ে দিতে পার্ত। সেটা ওরা পারলে না। আমি ওদের মন্ুষ্যুত্কে বাহাছুরী দিই। পরের দেশ শাসন করতে করতে সেই মনুষ্যত্ব ক্ষয় হয়ে আস্ছে তাতেই মরণদশা ধরছে ওদের ভিতর থেকে। এত বেশি বিদেশের বোঝা আর কোনো জাতের ঘাড়ে নেই এতে ওদের স্বভাব যাচ্চে নষ্ট হয়ে ।”

“সে ওরা বুঝবে কিন্তু তোমার এই অধ্যবসায়কে প্রায় অহৈতুক করে তুলেছ এটা আমার কাছে বাড়াবাড়ি ঠেকে” |

“অত্যন্ত ভুল! আমি অবিচার করব মা, উন্মত্ত হব না, দেশকে দেবী বলে মী মা বলে আশ্রুপাত করব না, তবু কাজ করব, এতেই আমার জোর !”

“শক্রকে যদি শক্র বলে তাকে দ্বেষ না করো তবে তার বিরুদ্ধে হাত চালাবে কী ক'রে?

“রাস্তায় পাথর পড়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে হাতিয়ার

8৪ | | চার অধ্যায় চালাই যেমন ক'রে, অপ্রমত্ত বুদ্ধি নিয়ে। ওরা ভালো কি মন্দ সেটা তর্কের বিষয় নয় , ওদের রাজত্ব বিদেশী রাজত্ব, সেটাতে ভিতর থেকে আমাদের আত্মলোপ করছে-এই স্বভাববিরুদ্ধ অধস্থাকে নড়াতে চেষ্টা ক'রে আমার মানবস্বভাবকে আমি স্বীকার করি।”

“কিত্ত সফলতা সম্বন্ধে তোমার নিশ্চিত আশা নেই ।”

“নাই রইল, তবু নিজের স্বভাবের অপমান ঘটাব না--সামনে মৃত্যুই যদি সব চেয়ে নিশ্চিত হয় তবুও পরাভবের আশঙ্ক! আছে বলেই স্পদ্ধা করে তাকে উপেক্ষা ক'রে আত্ম-মর্ধ্যাদা রাখতে হবে। আমি তো মনে করি এইটেই আজ আমাদের শেষ কর্তব্য ।”

“এ আসছেন রক্তগঙ্গা বওয়াবার মেকি ভগীরথ। ওঁকে চা খাইয়ে আসিগে। সেই সঙ্গে স্পষ্টভাষায় খবরও দেব যে, পুলিসকে সব কথা রিপোর্ট করা হয়েছে। তোমার দলের বোকারা আমাকে লিঞ্চ, করেনা বসে।”

চার অধ্যায় | পা

ভ্বিভ্ভীল্ল অগ্যাম্ত

এলা বসে আছে কেদারায়, পিঠে বালিশ গৌজা লিখছে এক মনে পায়ের উপর পা তোলা দেশ- বন্ধুর মূত্তি-অক1 খাতা! কাঠের বোর্ডে কোলের উপর আড় ক'রে ধরা। দিন ফুরোতে দেরি নেই, কিন্তু তখনো চুল রয়েছে অযত্রে। বেগ্নি রঙের »খন্দরের ৃ্‌ সাড়ি গায়ে, স্টোতে মলিনতা অব্যক্ত থাকে, তাই নিভৃতে ব্যবহারে তার অনাদূত প্রয়োজন এলার হাতে এক জোড়া লাল রং-কর! শীখা, গলায় এক ছড়া সোনার হার। হাতির দাতের মতো গোৌরবর্ণ শরীরটি আাটরাট ; মনে হয় বয়স খুব কম কিন্তু মুখে পরিণত বুদ্ধির গান্তীধ্য। খদ্দরের সবুজরঙের চাদরে ঢাকা সন্কীর্ণ লোহার খাট ঘরের প্রান্তে দেয়াল-ঘেঁষা। নারায়ণী স্কুলের তাতেবোনাঁ সতরঞ্চ মেঝের ' উপর পাতা একধারে লেখবার ছোটো: টেবিলে ব্লটিং প্যাড; তার এক পাশে কলম পেন্সিল সাজানো দোয়াতদান, অন্যধারে পিতলের ঘটিতে গন্ধরাজ ফুল। দেয়ালে ঝুলছে কোনো একটি দূরবন্তী কালের ফোটো-

হি "চার অধ্যষ

গ্রাফের প্রেতাত্মা, ক্ষীণ হল্দে রেখায় বিলীনপ্রায়। অন্ধকার হোলো, আলো জালবার সময় এসেছে। _. উঠ্ভিউঠি করছে এমন সময় খদ্দরের পার্দাটা সরিযে দিয়ে অতীন্দ্র দমকা হাওয়ার মতো ঘরে ঢুকেই ডাক দিল, “এলী”। এলা খুসিতে চম্‌কে উঠে বল্লে,_-“অসভ্যা, 'জানান্‌ না দিয়ে ঘরে আসতে সাহস করো !” এল!র পায়ের কাছে ধপ্‌ করে মেঝের উপর বসে অতীন বল্লে, “জীবনটা! অতি ছোটো, কায়দাকানুন অতি দীর্ঘ, নিয়ম বাঁচিয়ে চলবার উপযুক্ত পরমায়ু ছিল সনাতন যুগে মান্ধাতার। কলিকালে তার টানাটানি পড়েছে ।” “আমার কাপড় ছাড়া হয়নি এখনো 1৮ “ভালোই। তাঁহোলে আমার সঙ্গে মিশ খাবে তৃমি থাফবে রথে, আমি থাকব পদাতিক হয়ে- এরকম ছ্ন্ব মন্নুর নিয়মে অধশ্্ব। এককালে আমি ছিলুম নিখুৎ ভদ্রলোক, খোলোষটা তুমিই দিয়েছ ঘুচিয়ে বর্তমান বেশভৃষাটা দেখছ কী রকম ?” “অভিধানে ওকে বেশভষা বলে না» “কী বলে তবে £ |

চার অধ্যায় . " রি রি

“শব পাচ্চিনে খুঁজে বোধ হয় ভাষায় নেই জামার সাম্নেটাতেই যে বাকাচোর! ছে'ড়ার দাগ, কি তোমার স্বকৃত সৈলাইয়ের লম্বা বিজ্ঞাপন ?”

“ভাগ্যের আঘাত দারুণ হোলেও বুক পেতেই নিয়ে থাকি_ওটা তারি পরিচয়। জামা দর্জিকে দিতে সাহস হয় না, তার তো আত্মসম্মান-বোধ আছে”

“আমাকে দিলে না কেন?”

“নব যুগের সংস্কারভার নিয়েছ,তার উপরে পুয়োনো জামার সংস্কার ?”

“ওটাকে সহ্য করবার এমনি কী দরকার ছিল ?” “যে দরকারে ভদ্রলোক তার স্ত্রীকে সহ করে|” “তার অর্থ ?”

“তার অর্থ, একটির বেশি পেই ব'লে ।”

“কী বলো তুমি অন্ত! বিশ্বংসারে তোমার একটি বই জাম! আর নেই ?” পু

“বাড়িয়ে বলা অন্যায়, তাই কমিয়ে বল্লুম। পূর্ব আশ্রমে শ্রীযুক্ত অতীন্দ্রবাবুর জাম! ছিল বনুসংখ্যক বুবিধ। এমন সময়ে দেশে এলো বন্তা। তুমি বক্তৃতায় বল্লে, যে অশ্রপ্লাবিত ছুর্দিনে, (মনে আছে, অশ্রুপ্লাবিত বিশেষণট! ?) বু নরনারীর লজ্জ। রক্ষার

«৭:৪৮ | চার অধ্যায়

মতো কাপড় জুটছে না, সে সময়ে আবশ্যকের অতিরিক্ত কাপড় যার আছে লজ্জা তারই। বেশ গুছিয়ে বলেছিলে তখনো তোমার সম্বন্ধে প্রকাশ্তে হাসতে সাহস ছিল না। মনে মনে হেসেছিলুম নিশ্চিত জানতুম আবশ্বকের বেশি জাম ছিল তোমার বাঝেে। কিন্তু মেয়েদের পঞ্চাশ রঙের পঞ্চাশটা জামা থাকলেও পঞ্চাশটাই অত্যাবন্যক। সেদ্রিন দেশহিতৈষিণীদের মধ্যে রেশীরেশি চলছিল,কে কত দান সংগ্রহ করতে পারে। এনে দিলুম আমার কাপড়ের তোরঙ্গ তোমার চরণতলে হাততালি দ্রিয়ে উঠলে খুসিতে 1”

“সে কী কথ! আমি কিজানি অমন নিঃশেষ করে দেবে ??

“আশ্চর্য হও কেন? দুঃসাধ্য ক্ষতিসাধনের শক্তি এই দেহে দুর্জয়ৰেগে সঞ্চার করলে কে? সংগ্রহের ভার যদি থাকত আমাদের গণেশ মজুমদারের "পরে তাহলে তার পৌরুষ, আমার কাপড়ের বাক্সে ক্ষতি করত অতি সামান্য 1”

“ছি ছি অন্ত, কেন আমাকে বল্‌্লে না?” |

“ছুঃখ কোরো না। একান্ত শোচনীয় ন্য়, দুটো জামা রাঙিয়ে রেখে দিলুম নিত্য আবশ্যকের গরজে,

চার অধ্যায় টু |] ৪৯

পালা করে কেচে পরা চল্ছে! আরো ছুটো আছে আপদ্ন্মের জন্তে ভাজ করা যদি কোনোদিন সন্দিগ্ধ ংসারে ভদ্রবংশীয় বলে প্রমাণ দেবার প্রয়োজন ঘটে সেই জামা ছুটোতে ধোবা-দরজির সার্টিফিকেট রইল |” “স্থপ্টিকর্তার সার্টিফিকেট রয়েছে চেহারাতেই-_ সাক্ষী ডাকতে হবে না তোমার |” “স্তুতি ! নারীর দরবারে স্তবের অতুযুক্তি চিরদিন পুরুষদেরই অধিকারভুক্ত, তুমি উল্টিয়ে দিতে চাও ?” “হা চাই। প্রচার করতে চাই, আধুনিক কালে মেয়েদের অধিকার বেড়ে চলেছে পুরুষের সম্বন্ধে সত্য বলতে তাদের বাধা নেই। নব্য সাহিত্যে দেখি-_বাঙালী মেয়েরা নিজেদেরই প্রশংসায় মুখরা, দেবীপ্রতিমা বানাবার কুমোরের কাজটা নিজেরাই নিয়েছে স্বজাতির গুণ গরিমার উপরে সাহিত্যিক রং চড়াচ্চে। সেটা তাদের অঙ্গরগেরই সামিল, স্বহস্তের বাটা, বিধাতার হাতের নয়। আমার এতে লজ্জ। করে। এখন চলো বসবার ঘরে ।” «এঘরেও বসবার জায়গা আছে আমি তো! একাই একটা! বিরাট সভা নই 1%

৫৩ | চার অধ

“আচ্ছ। তবে বলো জরুরী কথাট। কী ?”

“হঠাৎ কবিতার একট পদ মনে পড়ে গেছে অথ কোথায় পড়েছি কিছুতেই মনে আসছে না। সকাল থেকে হাওয়। হাৎড়িয়ে বেড়াচ্চি। তোমাকে জিজ্ঞাস করতে এলুম |”

“অত্যন্ত জরুরী দেখছি আচ্ছা বলে।1৮ "

“একটু ভেবে বলো কার রচনা £_

তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ ।৮

“কোনো নামজাদা কবির তো। নয়ই 1”

পপূর্বরশ্রুত বলে মনে হচ্চে না তোমার ?”

«চেনা গলার আভাস পাচ্চি একটুখানি অন্য লাইনটা গেল কোথায় ?”

“আমার বিশ্বাম হিল, অন্য ডা আপনিই তোমার মনে আসবে ।”

“তোমার মুখে যদি একবার শুনি তাহোলে নিশ্চয় মনে আস্বে

“তবে শোনো ১5

"অধ্যার ৫১,

প্রহর শেষের আলোয় রাউী' সেদিন চৈত্রমাস,

. তোমার চোখে দেখেছিলাম 2৮ আমার সর্বনাশ ... অতীনের মাথায় করাঘাত করে এলা বললে. | “আজকাল কী পাগলামি সুরু করেছ তুমি 1”

«সেই চৈত্রমাসের বারবেলা থেকেই আমার পাগলামি সুরু যে সব দ্রিন চরমে না পৌছতেই “ফুরিয়ে যায় তারা ছায়ামূর্তি নিয়ে ঘুরে "বৈড়ায় কল্পলোকের দিগন্তে তোমার সঙ্গে আমার মিলন সেই মরীচিকার বাসর ঘরে। আজ সেইখানে তোমাকে ডাক দিতে এলুম__কাজের ক্ষতি কর্ব 1৮

কাঠের বোর্ড আর খাতাখানা মেঝের, উপর ফেলে দিয়ে এলা বল্লে, “থাক্‌ গড়ে আমার কাজ। আলোট! জেলে দিই”

“না থাক আলো প্রত্যক্ষকে প্রমাণ করে, চলো দীপহীন পথে অপ্রত্যক্ষের দিকে চার বছরের কিছু কম হবে, স্টীমারে খেয়া পার হচ্চি মোকামার ঘাটে। তখনো আকৃড়ে ছিলুম পৈতৃক সম্পত্তির ভাঙা কিনারটাকে সেট। ছিল দেনার গর্তে ভরা তখনো দেহে মনে সৌখীন-

৫২ , চার অধ্যায়

ড়

তার রং লেগে ছিল দেউলে দিনান্তের মেঘের মতো গায়ে সিক্কের পাঞ্জাবী, পাট-করা মুগার চাদর কাধে একলা বসে আছি ফষ্টক্লাস ডেকৃ*্এ বেতের কেদারায়। ফেলে-দেওয়।৷ খবরের কাগজের পাতাগুলে। ফরফর ক'রে এধারে ওধারে উড়ে বেড়াচ্ছিল, মজা লাগছিল দেখতে, মনে হচ্ছিল মূর্তিমতী জনশ্রুতির এলোমেলো নৃত্য তুমি জনসাধারণের দলে, কোমর বেঁধে ডেক্‌- প্যাসেঞ্লার। হঠাৎ আমার পশ্চাদবর্তী অগোচরতার মধ্য থেকে দ্রতবেগে এসে পড়লে আমার সামনে আজো চোখের উপর দেখতে পাচ্চি তোমার সেই ব্রাউন রঙের সাড়ি:, খোপার সঙ্গে কাটায় বেঁধা তোমার মাথার কাপড় মুখের ছুইধারে হাওয়ায় ফুলে উঠেছে। চেষ্টাকৃত অসঙ্কোচের ভান করেই প্রশ্ন করলে,_আপনি খদ্দর পরেন না কেন 1 মনে পড়ছে ?” ্‌

প্ুব স্পষ্ট তোমার মনের ছবিকে তুমি কথা কওয়াতে পারো, আমার ছবি বোবা 1”

“আমি আজ সেদিনের পুনরুক্তি করে যাব, তোমাকে শুনতে হবে |”

“শুন্ব না তো কী। সেদিন যেখানে আমার নৃতন

চার অধ্যায় ৫৩

জীবনের ধুয়ো, পুনঃ পুনঃ সেখানে আমার মন ফিরে আসতে চায়।”

“তোমার গলার সুরটি শুনেই আমার সর্র্বশরীর চমূকে উঠল, সেই স্থুর আমার মনের মধ্যে এসে লাগ্ল হঠাৎ আলোর ছটার মতো; যেন আকাশ থেকে কোন্‌ এক অপরূপ পাখী ছে মেরে নিয়ে গেল আমার চিরদিনটাকে। অপরিচিতা মেয়েটির অভাবনীয় 'স্পদ্ধায় দি রাগ করতে পারতুম তাহোলে সেদিনকার খেয়াতরী এত বড়ো আঘাটায় পৌছিয়ে দিত নাঁ_ভদ্র পাড়াতেই শেষ পর্যন্ত দিন কাটৃত চল্তি রাস্তায়। মনটা আর্র দেশালাই কাঠির মতো, রাগের আগুন জ্বল্লনা। অহম্কার আমার স্বভাবের সর্ধপ্রধান সদ্‌- গুণ, তাই ধ। করে মনে হোলো, মেয়েটি যদি আমাকে বিশেষভাবে পছন্দ না করত তাহোলে এমন রিশেষ- ভাবে ধমক দিতে আসত না»খন্দরপ্রচার__ও একটা ছুঁতো, সত্যি কিনা বলো |”

“ওগো, কতবার বলেছি,_অনেকক্ষণ ধ'রে ডেকের কোণে বসে তোমাকে চেয়ে চেয়ে দেখছিলুম। তুলে গিয়েছিলুম আর কেউ সেটা লক্ষ্য করছে কি না। জীবনে সেই আমার সবচেয়ে আশ্চধ্য এক-চমকের চির-

€8 চার অধ্যায়

পরিচয়। মন বল্লে, কোথা থেকে এলো এই অতি দূর জাতের মানুষটি, চারদিকের পরিমাপে তৈরি নয়, শ্যাওলার মধ্যে শতদল পদ্ম। তখনি মনে মনে পণ করলুম এই ছুর্লভ মানুষটিকে টেনে আন্তে হবে, কেবল আমার নিজের কাছে নয়, আমাদের সকলের কাছে।” | “আমার কপালে তোমার একবচনের চাওয়া! চাপা পড়ল বছুবচনের চাওয়ার তলায় ।”

“আমার উপায় ছিল না অন্ত। দ্রৌপদীকে দেখবার আগেই কুস্তী বলেছিলেন, তোমরা সবাই মিলে ভাগ করে নিয়ো তুমি আসবার আগেই শপথ করে দেশের আদেশ স্বীকার করেছি, বলেছি আমার একলার জন্যে ধকছুই রাখব না। দেশের কাছে আমি বাগদত্ত।।” |

: “অধার্মিক তোমার পণ্গ্রহণ, পণকে রক্ষা করাও প্রতিদ্রিন তোমার স্বধন্মাবিদ্রোহ। পণ যদি ভাঙতে তবে সত্য রক্ষা হোতো | যে লোভ পবিত্র ঘ। অস্তর্ধ্যামীর আদেশবাণী, তাকে দলের পায়ে দলিত করেছ এর শাস্তি তোমাকে পেতে হবে 1”

“অন্ত, শাস্তির সীমা নেই, দিনরাত মারছে

চার অধ্যায় |

আমাকে যে আশ্চর্য্য সৌভাগ্য সকল সাধনার অতীত, য! দৈবের অযাচিত দ্রান তা এলো আমার সাম্নে, তবু নিতে পারলুম না। হৃদয়ে হৃদয়ে গাঠবীধা, তৎসত্বেও এত বড়ো দুঃসহ বৈধব্য কোনো মেয়ের ভাগ্যে যেন না ঘটে। একটা মন্ত্রপড়া বেড়ার মধ্যে ছিলুম; কিন্তু তোমাকে দেখবামাত্র মন উৎনুক হয়ে উঠল, বল্লে--ভাঙক সব বেড়া এমন বিপ্লব ঘটতে পারে সেকথ! কোনোদিন ভাবতে পারিনি এর আগে কখনো মন বিচলিত হয়নি বল্লে মিথ্যে বলা হবে। কিন্ত চঞ্চলতা জয় ক'রে খুসি হয়েছি নিজের শক্তির গবের | জয় করবার সেই গর্ব আজ নেই, ইচ্ছে হারিয়েছি-বাহিরের কথ। ছেড়ে দাও, অন্তরের দিকে তাকিয়ে দেখো, হেরেছি আমি তুমি বীর, আমি তোমার বন্দিনী

“আমিও হেরেছি আমার সেই বন্দিনীর' কাছে। হার শেষ হয়নি, প্রতি মুহুঠর্তর যুদ্ধে প্রতি মুহুর্তেই হারছি।” |

“আন্ত, ফঞ্টক্লাস ডেক-এ যখন অপূর্ব আবির্ভাবের মতো আমাকে দূর থেকে দেখা দিয়েছিলে তখনো জানতুম খর্ভক্লাসের টিকিটটা আমাদের আধুনিক

«৫৬ চার অধ্যা;

আভিজাত্যের একটা উজ্জল নিদর্শন অবশেষে তুমি

চড়লে রেলগাড়িতে সেকেওক্লামে। আমার দেহমনকে প্রবল টান দিলে সেই ক্লাসের দিকে এমন কি, মনে একটা চাতুরীর কল্পনা এসেছিল, ভেবেছিলুম, ট্রেন ছাড়বার শেষমূহুর্তে উঠে পড়ব তোমার গাড়িতে, বলব,__ তাড়াতাড়িতে ভূলে উঠেছি। কাব্যশাস্ত্রে মেয়েরাই অভিসার করে এসেছে, সংসারবিধিতে বাধা আছে বলেই 'কবিদের এই করুণা উস্খুস-করা মনের যত সব এলোমেলো ইচ্ছে ভিতরের অশাধার কোঠায় ঘুর খেয়ে খেয়ে দেয়ালে মাথা ঠুকে ঠুকে বেড়ায়। এদের কথা মেয়েরা পর্দার বাইরে কিছুতে স্বীকার করতে চায় না। তুমি আমাকে ত্বীকার করিয়েছ।”

“কেন স্বীকার করলে ?”

“নারীজাতির গুমর ভেঙে কেবল স্বীকারটুকুই তোমাকে দিতে পেরেছি, আর তো কিছু পারিনি |”

হঠাৎ অতীন এলার "হাত চেপে ধরে ঝ'লে উঠল, “কেন পারলে না? কিসের বাধা ছিল আমাকে গ্রহণ করতে? সমাজ? জাতিভেদ ?”

“ছি, ছি, এমন কথা৷ মনেও কোরো না। বাইরে বাধা নয়, বাধা অন্তরে |” |

চার অধ্যায় ৫৭.

“যথেষ্ট ভালোবামোনি ?”

“এ যথেষ্ট কথাটার কোনে মানে নেই অন্ত ফে. শক্তি হাত দিয়ে পর্ববতকে ঠেলতে পারেনি তাকে দুর্বল বলে অপবাদ দিয়ো না। শপথ ক'রে সত্য গ্রহণ করেছিলুম, .বিয়ে করব না | না করলেও হয় তো। বিয়ে সম্তব হোতো না|”

“কেন হোতো! না ?? , পরাগ কোরো না অন্ত, ভালোবাসি ঝলেই সস্কোচ 'আমি নিঃম্ব, কতটুকুই বা তোমাকে দিতে পারি !৮

“স্পষ্ট করেই বলে।।”

“অনেকবার বলেছি ।”

“আবার বলো, আজ স্ব বলা কওয়া শেষ ক'রে নিতে চাই, এর পরে আর জিজ্ঞাসা করব না।”

বাইরে থেকে ডাক এলো) “দিদ্রিমণি |”

“কী রে অখিল, আয় না ভিতরে ।”

ছেলেটার বয়ম ষোলো “কিম্বা আঠারো হবে। জেদালো ছুষ্ট,মি-ভরা প্রিয়দর্শন চেহারা কৌকড়া চুল ঝাকৃড়ামাকৃড়া ; কচি শামলা রং, চঞ্চল চোখ ছুটো জ্বলজ্বল করছে খাকি রঙের শটপরা, কোমর পর্যন্ত ছাট সেই রঙেরই একট! বোতাম-খোলা জামা, বুক

| চার অধ্যায়

বের করা; শটের দুই দিককার পকেট নানা বাজে সম্পত্তিতে ফুলে-ওঠা, বুকের পকেটে বিচিত্র ফলাওয়ালা একটা হরিণের শিডের ছুরি; কখনো বা সে খেলার নৌকো কখনো এরোপ্লেনের নমুনা বানায়। সম্প্রতি মল্লিক কোম্পানির আয়ুবৈরঘদিক বাগানে দেখে এসেছে জলতোলা হাওয়! যন্ত্র; বিস্কুটের টিন প্রভৃতি নানা

ফাল্তো জিনিষ জোড়াতাড়া দিয়ে তারি নকলের চেষ্টা

চল্ছে। আঙুল কেটেছে, তার উপরে ন্তাকড়া জড়ানো, এল! জিজ্ঞাসা করলে কানে আনে নাঁ। এলা এই বাঁপ-মা-মরা ছেলের, দূর সম্পর্কের আত্মীয়, অনেক উৎপাত সহ্য করে। কার কাছ থেকে বেঁটে জাতের এক বাদর অখিল সন্কতা দামে কিনেছে জন্তট। ভাড়ারে চৌধ্যবৃত্ভিতে সুদক্ষ এলার ছোটো পরিবারে এই জন্তটা! একটা মস্ত অত্যাচার

"ঘরে ঢুকেই অখিল সলজ্জ দ্রতবেগে পা ছুয়ে এলাকে প্রণাম করলে ।' এলা বুঝলে প্রণামটা একটা কোনে বিশেষ অনুষ্ঠানের অন্তর্গত, কেননা ভক্তি- বৃত্তিটা অখিলের স্বভাবসিদ্ধ নয়।

এল বললে, “তোর অন্ত দাদাকে প্রণাম করবিনে 1” কোনো জবাব না দিয়ে অখিল অতীনের দ্রিকে পিঠ

চার অধ্যায় ৫৯ *

ফিরিয়ে খাড়া দাড়িয়ে রইল। অতীন উচ্চস্বরে হেসে উঠল। অখিলের পিঠ চাপড়িয়ে বল্লে, “সাবাস্‌, মাথা যদি হেট করতেই হয় তে! এক-দেবতার পায়ে। সেই একেশ্বরীর কাছে আমারও মাথা হেঁট, এখন প্রসাদের ভাগ নিয়ে রাগারাগি কোরো ন! ভাই, উদ্ত্তট বেশি”

এলা অখিলকে বল্লে, “তোর কী কথা আছে

বলে যা।” |

অখিল বল্লে, “কাল আমার মায়ের মৃত্যুদিন।”

“তাই তো ! একেবারে ভূলে গিয়েছিলুম। কাউকে শ্রাদ্ধের নিমন্ত্রণ করতে চাস্‌?”

“কাউকে না”

“তবে কী চাস্‌ 1”

“পড়ার ছুটি চাই তিনদিন ।”

“কী করবি ছুটি নিয়ে?”

“খরগোষের খীচা বানাব 1”

“্খরাগোষ তোর একটিও বাকি নেই, খাচা বাঁনাৰি কার জন্যে ?” 4

অতীন হেসে বল্লে, “খরগোষতো। কল্পনা করলেই হয়, খাচাটা বানানোই আসল কথা। মানুষ অনিত্য,

৭৬০ চার অধ্যায়

আসে আর যায় কিন্তু নিত্যকালের মতো পাকা ক'রে তাদের খাচা বানাবার ভার নিয়েছেন ভগবান মনু থেকে আরম্ভ ক'রে মন্তুর আধুনিক অবতার পর্্যস্ত। এই কাজে তাদের ভীষণ সখ |”

“আচ্ছা, অখিল য। তোর ছুটি !”

দ্বিতীয় কথাটি না বলে অখিল দৌড়ে চলে গেল।

অতীন বল্‌্লে, “ওকে পোষ মানাতে পারলুম না। আমার সাবেক সম্পত্তির ঝড়তি-পড়তির মধ্যে ছিল একটা কবজি ঘড়ি, আধুনিক ছেলেদের পক্ষে সাত-রাজার ধন। একদিন সেটা ওকে দিতে গিয়ে- ছিলুম। মাথ! ঝাঁকানি দিয়ে চলে গেল। এর থেকে বুঝবে ওতে আমাতে*ব্যাপারটা কমুযুন্তাল হয়ে উঠেছে, অন্ত-অখিল রায়ট হবার লক্ষণ ।”

“ছেলেদের সঙ্গে ভাব করতে তোমার জুড়ি কেউ নেই, তবু এই বাদরটার কাছে হার মান্লে কেন ?”

“মাঝখানে আছে তৃতীয় পক্ষ, নইলে ওতে আমাতে হরিহর বনে যেতুম। থাক্‌ সে কথা; এখন বলো, তোমার কৈফিয়ংটা কী? কেন আমাকে লরিয়ে রাখলে রা

চার অধ্যাযু ৬১

“একটা সোজ1 কথা কেন তুমি মনে রাখো না যে, | তোমার চেয়ে আমি বয়সে বড়ো ?”

“কারণ এই সেজা কথাট। ভুলতে পারিনি যে, তোমার বয়স আটাশ, আমার বয়স আটাশ পেরিয়ে কয়েক মাস। প্রমাণ কর! খুব সহজ, কারণ দলিলটা! তাত্রশাসনে ব্রাহ্মীলিপিতে লেখা নয়।”

“আমার আটাশ তোমার আটাশকে বহুদূরে পেরিয়ে গেছে। তোমার আটাশে যৌবনের সব সল্তেই নিধূমে জল্ছে। এখনো তোমার জানলা খোলা যাদের দিকে, তারা অনাগত তারা অভাবিত |”

“এলী, আমার কথাট। কিছুতে বুঝতে চাচ্চ না বলেই বুঝছ না। দলের কাছে ভগবানের মত্যের বিরুদ্ধে সত্য নিয়েছ তাই নীনা তর্ক বানিয়ে নিজেকে ভোলাচ্চ, আমাকেও ভোলাও কিন্তু কথা বোলো না আমার জীবনে এখনো অনাগত অভাবিত দরে রয়ে গেছে। এসেছে সে, সে তুমি তবুও আজও সে অনাগত ! চিরদিনই কি তবে জানল। খোলা থাকবে তার দিকে? সেই শুন্তের ভিতর দিয়ে কেবলি বাজবে আমার আর্তবন্ুর, চাই তোমাকে চাই, আর অন্য দিক দিয়ে ফিরে আসবে না কোনো উত্তর ?”

ঙং | চার অধ্যায়

)

টি

পর্ধরে আসছে না এমন কথ| বল্ছ কী ক'রে অকতজ্ঞ? চাই, চাই, চাই, তোমার চেয়ে বেশি কিছুই চাইনে জগতে যে সময়ে দেখা হোলে শুঁভ-

দৃষ্টি সম্পূর্ণ হোতে। সে সময়ে হয়নি যে দেখা কিন্ত

তবু বলছি ভাগ্যে হয়নি ।”

“কেন? কীক্ষতি হোতে। তাতে ?”

“আমার জীবন সার্থক হোতো, কতটুকুই বাঁ তার দাম। কারো মতো নও যে তুমি; মস্ত তুমি। তফাতে . আছি বলেই দেখতে পেলুম সেই তোমার অলোক- সামান্য প্রকাশ সামান্য আমাকে দিয়ে তোমাকে জড়িয়ে ফেল্বার কথ! কল্পনা করতে আমার ভয় করে। আমার ছোটে সংসারে প্রতিদিনের তুচ্ছতার মানুষ হবে তুমি! আমি কত উপরে মুখ তুলে তোমার মাথা দেখতে পাই তোমাকে বোঝাব কেমন করে ? মেয়ে- দের সম্বল জীবনের যত সব খুঁটিনাটি, সেই বোঝ দিয়ে তোমাদের মতো পুরুষের জীবনকেও চাপা দিতে ভয় পায়না এমন মেয়ে হয়তো আছে; তারা ট্র্যাজেডি ঘটিয়েছে কত আমি তা জানি। চোখের সামনে দেখেছি লতার জালে বনম্পতিকে বাড়তে দ্রিল না; সেই মেয়ের] বুঝি মনে করে তাদের জড়িয়ে ধরাই যথেষ্ট 1”

গার অধ্যায় ৬৩

“এলা, যে পায় সেই জানে যথেষ্ট কাকে বলে।”

“নিজেকে . ভোলাতে চাইনে, অন্ত। প্রকৃতি আমাদের আজন্ম অপমান করেছে আমর! বায়োলজির সংকল্প বহন ক'রে এসেছি জগতে সঙ্গে সঙ্গে এনেছি জীবপ্রকৃতির নিজের জোগানো অস্ত্র মন্ত্র। সেগুলো ঠিকমতে। ব্যবহার করতে জানলেই সস্তায় আমরা জিতে

নিতে পারি আমাদের সিংহাসন। সাধনার ক্ষেত্রে

পুরুষকে প্রমাণ করতে হয় তার শ্রেষ্ঠতা। সেই শ্রেষ্ঠতা

যে কী, ভাগ্য ক্রমে আমি তা জানবার স্থযোগ পেয়েছি পুরুষরা আমাদের চেয়ে অনেক বড়ো ।”

“মাথায় বড়ো ।৮..৫.

“ইহ! মাথায় বড়োই তো। প্র 8 কে অতিক্রম ক'রে বড়ো হবার তোরণ-দ্বার সেহ্মাথায | আমার ুদ্ধিন্দ্ধি যথেষ্ট থাক্‌ না থাক আমি নম্র হয়ে নিজেকে নিবেদন করতে পেরেছি সেই উপরেবু দিকে চেয়ে।??

"কোনো নীচ উৎপাত করেনি ?”

“করেছে। আমাদের টানে যারা নেমে আসে

বায়োলজির নীচের তলায়, তারা বিশ্রী হয়ে বিগড়ে

যায়। ব্যক্তিগত বিশেষ ইচ্ছে বা প্রয়োজন না থাকলেও

*

€.

৬৪8 | | চার অধ্যায়

নীচে ট্রেনে আন্বার একটা সাধারণ ষড়যন্ত্রে আমরা সমস্ত মেয়ে এক হয়ে যোগ দিয়েছি, সাজে সঙ্জায়

হাবেভাবে বানানো কথায় |”

“বোকাদের ভোলাবার জন্যে ?”

“হা গো, তোমরা বোকা! অতি সহজ মান্ত্বেই ভোলো, তাই আমাদের এত গুমর আমরা বোকাদের ভালোবেসেছি, তবু তাদের স্থল বোকামির সর্বোচ্চ শিখরে দেখেছি সৃষ্য্যোদয়, আলো এনেছে তারা, পুজা করেছি তখন। অনেক দেখেছি ইতর নোংরা নিন্দুক, অনেক দেখেছি কৃপণ কুৎসিত। সব বাদ দিয়ে সব মেনে নিযে তবু অনেক বাকি থাকে সেই বাকিদেরই দেখেছি উজ্জল আলোয়। তাদের অনেকের নাম থাকবে না কারো মনে, তবু তারা! বড়ো”

“এলী, তোমার কথা শুনে লজ্জা করছে, মনে হচ্ছে, একটা প্রতিবাদ না করলে ভালো শোনাবে না। তবু ভালোও লাগছে কিন্তু সত্য কথায় তোমার কাছে হার মানতে পারব না। আমাদের দেশের পুরুষদের যে-কাপুরুষতার লক্ষণ ছেলেকে। থেকে দেখেছি, যার কথা আমাকে বারবার ভাবিয়েছে সে' আমি আজ তোমার কাছে বল্ব।

চার অধ্যায় | . ৬৫

আমি দেখেছি আমার জানা পরিবারের মধ্যে এবং আমার নিজের পরিবারেও শাশুড়ির অসহ্য অন্যায় আধিপত্য শাশুড়ির অত্যাচারের কথা চিরকাল এদেশে প্রচলিত ।৮__

“হা সেতো জানি। নিজের ঘরে দেখেছি, যে- মানুষ হাড়ে ছুবরবল, ছুর্বলের যম সেতার মতো! নিষ্ঠুর কেউ হোতে পারে না।”

“এলা, ওকথা ব'লে তুমি তোমার ভাবী শ্বাগুড়ির নিন্দার ভূমিকা করে রেখো না। . নববধূর "পরে অমানুষিক অত্যাচারের খবর প্রায় শুনতে পাই, আর দেখি তার প্রধান নায়িকা শাশুড়ি। কিন্তু শাশুড়িকে অপ্রতিহত অন্যায় করবার অধিকার দিয়েছে কে? সেতো মায়ের খোকারা ! অত্যাচারিণীর বিরুদ্ধে নিজের শ্ত্রীর সন্ত্রম রাখবার শক্তি নেই যাদের সেই নাবালকদের কখনোই কি বিয়ে করবার বয়স হয়? যখন হয় তখন তারা স্ত্রীর খোক্কা হয়ে ওঠে যেখানে পুরুষের পৌরুষ ছুববল সেখানেই মেয়েরা নেবে আসে আর নাবায় নীচতার দিকে। আজ দেখি আমাদের দেশে যারা বড়ো-কিছু করবার সংকল্প করে তারা মেয়েকে ত্যাগ করতে চায়-মেয়েকে ভয় করে সেই

[৬৬ | চার অধ্যায়

স্ত্রণ কাপুরুষেরা। সেইজন্যেই এই কাপুরুষের দেশে তুমি পণ করেছ বিয়ে করবে না, পাছে কোনো কচি মন বেঁকে যায় তোমার মেয়েলি প্রভাবে যথার্থ, পুরুষ যারা, তারা যথার্থ মেয়ের জোরেই চরিতার্থ হবে_বিধাতার নিজের হাতের এই হুকুমনামা আছে আমাদের রক্তে। যে সেই বিধিলিপিকে ব্যর্থ করে সে পুরুষনামের যোগ্য নয়। পরীক্ষার ভার ছিল তোমার হাতে, আমাকে পরীক্ষা ক'রে দেখলে না কেন ?”

“অন্ত, তর্ক করতে পারতুম কিন্তু তোমার সঙ্গে তর্ক করব না। কেন না, জানি তুমি নিতান্ত ক্ষোভের মুখে এই সব কুযুক্তি পেড়েছে। আমার পণের কথা কিছুতেই ভুলতে পারছ না ।”

“না ভুলতে পারব না। তুমি বল্লে কি না, পুরুষর! মস্ত বড়ো, মেয়েরা তাদের ছোটো করবে এই তোমার ভয়! মেয়েদের বড়ো হবার দরকারই হয় না। তারা যতটুকু ততটুকুই সুসম্পূর্ণ। হতভাগ। যে-পুরুষ বড়ো নয় সে অসম্পূর্ণ, তার জন্যে স্থষ্টিকর্তা লঙ্জিত।” |

“অন্ত, সেই অসম্পূর্ণের মধ্যেও আমরা বিধাতার ইচ্ছাটা দেখতে পাই,__সেটা বড়ো ইচ্ছা ।”

চার অধ্যায় 2 . ৬৭

“এলী, বিধাতার ইচ্ছাটাই যে বড়ো তা বল্তে পারিনে, তার কল্পনাটাও কোনো অংশে ছোটো সনয়। সেই কল্পনার তুলির ছেণাওয়ায় জাছু লেগেছে মেয়েদের প্রকৃতিতে, তারা সংসারের ক্ষেত্রে এনেছে আর্টিষ্টের সাধনা, রঙে সুরে আপন দেহে মনে প্রাণে অনির্ববচনীয়কে প্রকাশ কর্ছে। এটা সহজ শক্তির কর্ম, সেইজন্যেই এটা] সহজ নয়। যে তোমার শাখের মতো চিকন রঙের কণ্ঠে সোনার হারটি দেখা দিয়েছে ওর জন্যে তোমাকে নোট বই মুখস্থ করতে হয়নি। আপনার জীবনলোকে রূপের স্থষ্টিতে রস জাগাতে পারল না, এমন হত্ত- ভাগিনী আছে, মোটা সোনার বাল পরে গিন্নিগন। করে সেই মুখরা ; নয়তো দাসী হয়ে জীবন কাটায় উঠোন নিকিয়ে। সংসারে এই সব অকিঞ্চিংকরের সীমা সংখ্যা নেই ।”

“স্থষ্টিকর্তাকেই দোষ দেব অন্ত। লড়াই করবার শক্তি কেন দেননি মেয়েদের” বঞ্চনা ক'রে কেন তাদের আপনাকে বাচাতে হয়? পৃথিবীতে সব চেয়ে জঘন্য যে স্পাইয়ের ব্যবসা সেই ব্যবসাতে মেয়েদের নৈপুণ্য পুরুষের চেয়ে বেশি একথা যখন বইয়ে পড়্লুম তখন বিধাতার পায়ে মাথা ঠুকে বলেছি সাতজন্মে যেন

৬৮ | চার অধ্যায়

মেয়ে হয়ে না জন্মাই। আমি মেয়ের চোখে দেখেছি পুরুষকে, তাই সব কাটিয়ে তাদের ভালোকে দেখতে পেয়েছি, তাদের বড়োকে। যখন দেশের কথ ভাবি তখন সেই সব সোনার টুকরো! ছেলেদের কথাই ভাবি, আমার দেশ তারাই। তারা ভূল যদি করে, খুব বড়ে! করেই ভূল করে আমার বুক ফেটে যায় যখন ভাবি আপন ঘরে এরা জায়গা পেল না। আমি ওদেরই মা,'ওদেরই বোন, ওদেরই মেয়ে_এই কথা মনে ক'রে বুক ভরে ওঠে আমার। নিজেকে সেবিকা বল্‌্তে ইংরেজি-পড়। মেয়েদের মুখে বাধে-কিস্তু আমার সমস্ত হৃদয় বলে ওঠে আমি সেবিকা, তোমাদের সেবা করা আমার সার্থকতা আমাদের ভালোবাসার চরম এই ভক্তিতে |” |

“ভালোই তো; তোমার সেই ভক্তির জন্যে অন্কে পুরুষ আছে, কিন্তু আমাকে কেন? ভক্তি না হোলেও আমার চলবে * মেয়েদের সন্বন্ধের যে ফর্দটা তুমি দিলে, মা বোন মেয়ে, তার মধ্যে প্রধান একট বাদ পড়ে গেল, আমারি কপাল দোষে ।”

“তোমার নিজের চেয়ে তোমাকে আমি বেশি জানি অন্ত। আমার আদরের ছোটো খাঁচায় দিনে

চার অধ্যায় | ৬৯

তোমার ডানা উঠত ছট্ফটিয়ে। যে তৃপ্তির সামান্য উপকরণ আমাদের হাতে, তার আয়োজন তোমার কাছে একদিন ঠেকৃত তলানিতে এসে তখন জানতে পারতে আমি কতই গরীব। তাই আমার সমস্ত দাবী তুলে নিয়েছি, সম্পূর্ণ মনে সপে দিয়েছি তোমাকে দেশের হাতে সেখানে তোমার শক্তি স্থান-সঙ্ষোচে হুঃখ পাবে না।”

অত্যন্ত ব্যথার জায়গায় যেন ঘা লাগল, জ্বলে উঠল অতীনের দুই চোখ পায়চারি ক'রে এলো ঘরের এধার থেকে ওধারে। তারপরে এলার সামনে এসে দ্রাড়িয়ে বল্লে, “তোমাকে শক্ত কথা বলবার সময় এসেছে জিজ্ঞাসা করি দেশের কাছেই হোক্‌ যার কাছেই হোক্‌ তুমি আমাকে সপে দেবার কে? তুমি সঁপে দিতে পারতে মাধুধ্যের দান, যা তোমার যথার্থ আপন সামগ্রী। তাকে সেবা! বলো তো তাই বলো, বরদান বলো যদি তাও বলতে পারো; অহঙ্কার করতে যদি দাও তো করব অহঙ্কার, নর হয়ে যদি আসতে বলো দ্বারে তবে তাও আসতে পারি। কিন্তু তোমার আপন দানের অধিকারকে আজ দেখছ তুমি ছোটো! কারে নারীর মহিমায় অন্তরের এশ্বর্ধ্য যা

৭০ চার ধ্যায়ু

তুমি দিতে পারতে, তা সরিয়ে নিয়ে তুমি বলছ-_ দেশকে দিলে আমার হাতে। পারো না দিতে, পারো না, কেউ পারে না। দেশ নিয়ে এক হাত থেকে আর এক হাতে নাড়ানাড়ি চলে না |” বিবর্ণ হয়ে এলো এলার মুখ। বল্ল, “কী

বল্ছ, ভালো বুঝতে পারছিনে।”

. “আমি বলছি নারীকে কেন্দ্র ক'রে যে-মাধুধ্যলৌোক বিস্তৃত, তার প্রসার যদি বা দেখতে হয় ছোটো, অন্তরে তার গভীরতার সীমা নেই,-সে খাঁচা নয়। কিন্তু দেশ উপাধি দিয়ে ধার মধ্যে আমার বাসা নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলে তোমাদের দলের বানানো দেশে অন্যের পক্ষে যাই হোক আমার স্বভাবের পক্ষে সেই তো খাঁচা। আমার আপন শক্তি তার মধ্যে সম্পূর্ণ প্রকাশ পায় না বলেই অসুস্থ হয়ে পড়ে, বিকৃতি ঘটে তার, যা তার যথার্থ আপন নয় তাকেই ব্যক্ত করতে গিয়ে পাগ্লামি করে, লজ্জী পাই,অথচ বেরোবার দরজা বন্ধ জানে! না, আমার ডানা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছে, ছুই পায়ে আট হয়ে লেগেছে বেড়ি। আপন দেশে আপন স্থান নেবার দায় ছিল আপন শক্তিতেই,সে শক্তি আমার ছিল। কেন তুমি আমাকে সে কথা ভুলিয়ে দিলে ?”

চার অধ্যায় গা,

ক্রিষ্টকে এলা বল্লে, “তুমি ভুল্লে কেন, অস্ত?”

“ভোলাবার শক্তি তোমাদের অমোঘ, নইলে ভূলেছি বলে লজ্জা করতুম। আমি হাঁজারবার করে মান্ব যে, তুমি আমাকে ভোলাতে পারো, যদি না ভূলতুম, সন্দেহ করতুম আমার পৌরুষকে 1”

“তাই যদি হয় তবে আমাকে ভরসনা করছ কেন?”

«কেন? সেই কথাটাই বলছি। ভুলিয়ে তুমি সেইখানেই নিয়ে যাও যেখানে তোমার আপন বিশ্ব, আপন অধিকার। দলের লোকের কথার প্রতিধ্বনি ক'রে বল্লে, জগতে একটিমাত্র কর্তব্যের পথ বেঁধে দিয়েছ তোমরা ক'জনে | তোমাদের সেই শান-কাধানো সরকারী কর্তব্পথে ঘুর খেয়ে কেনলি ঘুলিয়ে উঠছে আমার জীবনস্রোত 1”

“সরকারী কর্তব্য 1৮ |

“হ| তোমাদের স্বদেশী কর্তব্যের জগন্নাথের রথ। মন্ত্রদাতা বল্লেন, সকলে মিলে একখানা মোট৷ দড়ি কাধে নিয়ে টানতে থাকো ছুই চক্ষু বুজে-_-এই একমাত্র কাজ। হাজার হাজার ছেলে কোমর বেঁধে ধর্ল দড়ি। কত পড়ল চাঁকার তলায়, কত হোলো চিরজন্মের মতো!

» ৭২ " চার অধ্যায়

পন্থু। এমন সময় লাগল মন্ত্র উল্টো রথের যাত্রায় ফিরল রথ। যাদের হাড় ভেঙেছে তাদের হাড় জোড়া লাগবে না, পঞ্চুর দলকে ঝাঁটিয়ে ফেল্লে পথের ধূলোর গাদায়। আপন শক্তির 'পরে বিশ্বাসকে গোড়াতেই এমনি ক'রে ঘুচিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, সবাই সরকারী পুতুলের ছাঁচে নিজেকে ঢালাই করতে দিতে স্পর্ধা করেই রাজি হোলো সর্দারের দড়ির টানে সবাই যখন একই নাচ নাচতে সুরু করলে, আশ্চর্য্য হয়ে ভাবলে--একেই বলে শক্তির নাচ। নাচনওয়াল! যেই একটু আল্গ! দেয়, বাতিল হয়ে যায় হাজার হাজার মানুষ-পুতুল |

“অন্ত, ওদের অনেকেই যে পাগলামি ক'রে পা। ফেলতে লাগল, তাল,রাখতে পারলে না।”

«“গোড়াতেই জানা উচিত ছিল মানুষ বেশিক্ষণ পুতুল-নবাচ নাচতে পারে না। মানুষের স্বভাবকে হয় তো! সংস্কার করতে পারো, তাতে সময় লাগে। স্বভাবকে মেরে ফেলে মানুষকে পুতুল বানালে কাজ সহজ হয় মনে করা ভূল। মানুষকে আত্মশক্তির বৈচিত্র্যবান জীব মনে করলেই সত্য মনে করা হয়। আমাকে সেই জীব ঝলে শ্রদ্ধা যদি করতে,

চার অধ্যায় | ৭৩.

তাহোলে আমাকে দলে তোমার টানতে না, বুকে টানতে ।”

“অন্ত, গোড়াতেই কেন আমাকে অপমান ক'রে তাড়িয়ে দিলে না? কেন আমাকে অপরাধী করলে ?”

"সে তো! তোমাকে বারবার বলেছি। তোন।র সঙ্গে মিলতে চেয়েছিলুম, এইটে অত্যন্ত সহজ কথা। দুর্জায় সেই লোভ প্রচলিত পথটা] ছিল বন্ধ। মরীয়। হয়ে জীবন পণ করলুম বাকা পথে। তুমি মুগ্ধ হোলে আজ জেনেছি আমাকে মরতে হবে এই রাস্তায়। সেই নরাটা চুকে গেলে তুমি আমাকে ছু"হাত বাড়িয়ে ফিরে ডাকৃবে-ডাকৃবে তোমার শুন্য বুকের কাছে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত |”

“পায়ে পড়ি, অমন ক'রে বোলো না 1৮

“বোকার মতো! বলছি, রোমান্টিক শোনাচ্চে যেন দেহহীন বস্তরহীন পাওয়াকে পাওয়া বলৈ! ' যেন তোমার সেদিনকার বিরহ আজকের দিনের প্রতিহত মিলনের এক কড়াও দাম শোধ করতে পারে 1”

“আজ তোমাকে কথায় পেয়েছে, অন্ত 19

“কী বলছ! আজ পেয়েছে! চিরকাল পেয়েছে যখন আমার বয়স অন্ন, ভালো করে মুখ ফোটেনি,

৭৪ | চার অধ্যায়

তখন সেই মৌনের অন্ধকারের ভিতর থেকে কথা ফুটে ফুটে উঠছিল, কত উপমা কৃত তুলনা, কত অসংলগ্ন বাণী। বয়স হোলো, সাহিত্যলোকে প্রবেশ করলুম, দেখলুম ইতিহাসের পথে পথে রাজ্য সাম্রাজ্যের ভগুস্তুপ, দেখলুম বীরের রণসজ্জা পড়ে আছে ভেঙে, বিদীর্ণ জয়ন্তান্তের ফাটলে উঠেছে অশথ গাছ ; বহু শতাব্দীর বহু প্রয়াস ধূলার সপে স্তব্[। কালের সেঈ আবর্জনা- রাশির সর্বোচ্চ দেখলুম অটল বাণীর সিংহাসন সেই সিংহাসনের পায়ের কাছে যুগযুগাস্তরের তরঙ্গ পড়ছে লুটিয়ে লুটিয়ে। কতদিন কল্পনা করেছি সেই সিংহা- সনের সোনার স্তস্তে অলঙ্কার রচনা করবার ভার নিয়ে এসেছি আমিও | তোমার অন্ত চিরদিন কথায়-পাওয়। মানুষ। তাকে কোনোদিন ঠিকমতো! চিনবে সে আশা আর রইল না_তাকে কিনা ভত্তি ক'রে নিলে দলেখ্ধ সতরঞ্চ খেলায় বড়ের মধ্যে !”

এলা চৌকি থেকে নেমে পড়ে অতীনের পায়ের উপর মাথা রাখলে। অতীন তাকে টেনে তুলে পাশে বসালে। বল্লে, “তোমার এই ছিপৃছিপে দেহখানিকে কথা দিয়ে দিয়েই মনে মনে সাজিয়েছি, তুমি আমার সঞ্চারিণী পল্লবিনী লতা, তুমি আমার

চার অধ্যায় ৭৫১

স্থখমিতি বা ছুঃখমিতি বা। আমার চারিদিকে আছে অদৃশ্য আবরণ, বাণীর আবরণ, সাহিত্যের অমরাবতী থেকে নেমে এসে ভিড ঠেকিয়ে রাখে তারা আমি চিরম্বতত্ত্র, সে কথা জানেন তোমাদের মাষ্টারমশীয়, তবু আমাকে বিশ্বাস করেন কেন ?”

“সেইজন্যেই বিশ্বাম করেন। সবার সঙ্গে মিলতে হোলে সবার মধ্যে নাবতে হয় তোমাকে তুমি কিছুতেই নাবতে পারো না। তোমার "পরে আমার বিশ্বাস সেই জন্যেই কোনো মেয়ে কোনো পুরুষকে এত বিশ্বাস করতে পারে নি। তুমি যদি সাধারণ পুরুষ হোতে তাহোলে সাধারণ মেয়ের মতোই আমি তোমাকে ভয় করতুম। নির্ভয় তোমার সঙ্গ 1”

“ধিক সেই নির্ভয়কে। ভয় করলেই পুরুষকে উপলব্ধি করতে দেশের জন্যে দুঃসাহস দাবী করো, তোমার মাতো মহীয়সীর জন্যে করবে না কেন? কাপুরুষ আমি। অসম্মতির নিষেধ ভেদ ক'রে কেন তোমাকে ছিনিয়ে নিয়ে যেতে পারিনি বনুপূর্ধধে যখন সময় হাতে ছিল? ভদ্রতা! ভালোবাসা তো বর্বর ! তার বর্বরতা পাথর ঠেলে পথ করবার জন্যে পাগ.লা- ঝোরা সে, ভদ্রেসহরের পোষ-মানা কলের জল নয়

* ৭৬ | চার অধ্যয়

এলা দ্রুত উঠে পড়ে বল্‌লে। চলো অস্ত, ঘরে চলো।”

অতীন উঠে দাড়াল, বললে “ভয়! এতদিন পরে সুর হোলে। ভয়! জিৎ হোলো আমার। যৌবন যখন প্রথম এসেছিল তখনো মেয়েদের চিনিনি। কল্পনায় তাদের ছুর্গম দূরে রেখে দেখেছি; প্রমাণ করবার সময় বয়ে গেল যে, তোমরা যা চাও তাই আমি। অন্তরে আমি পুরুষ, আমি বর্ধ্বর উদ্দাম। সময় যদি না হারাতুম এখনি তোমাকে বজ্ববন্ধনে চেপে ধরতুম, তোমার পাঁজরের হাড় টনটন করে উঠত; তোমাকে ভাববার সময় দিতুম না, কাদবার মতো নিশ্বাস তোমার বাকি থাকত না, নিষ্টুরের মতো টেনে নিয়ে যেতুম আপন কক্ষপথে আজ যে-পথে এসে পড়েছি পথ ক্ষুরধারার মতো সন্থীর্ণ, এখানে ছুজনে পাশাপাশি চলবার জায়গা নেই।”

“দক্ধ্য আমার, কেড়ে নিতে হবে না গো, নাও, ,এই নাও, এই নাও।” এই ব'লে ছু'হাত বাড়িয়ে গেল অতীনের কাছে, চোখ বুজে তার বুকের উপর পড়ে তার মুখের দিকে মুখ তুলে ধরলে

জানলা থেকে এল! রাস্তার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ বলে উঠল, “সর্বনাশ দেখতে পাচ্চ 1”

চার অধ্যায় রি ৭৭,

“কী বলো দেখি ?”

“এ যে রাস্তার মোড়ে। নিশ্চয় বটর-এখানেই আসছে ।”

“আসবার যোগ্য জায়গা সে চেনে 1

“ওকে দেখলে আমার সমস্ত শরীর সঙ্কুচিত হয়ে ওঠে। ওর স্বভাবে অনেকখানি মাংস, অনেকখানি ক্লেদ। যত চেষ্টী করি পাশ কাটিয়ে চলতে, ওকে দুরে ঠেকিয়ে রাখতে, ততই কাছে এসে পড়ে , অশুচি, অশুচি মান্ুুষট1।৮

“আমিও ওকে সহ্য করতে পারি নে এলা |”

«“৪র সম্বন্ধে অন্যায় কল্পনা করছি বলে নিজেকে শান্ত করবার অনেক চেষ্টা করি-কোনোমতেই পারি নে। ওর ড্যাবা ড্যাব চোখ ছুটো দূরের থেকে লালায়িত স্পর্শে যেন আমার অপমান করে।”

“ওর প্রতি ভ্রক্ষেপ কোরো না এলা মনে মনে ওর অস্তিত্বকে একেবারে উপেক্ষা করতে পারো না ?”

“ওকে ভয় করি বলেই মন থেকে সরাতে পারি নে। ওর একটা ভিতরকার চেহারা দেখতে পাই কুৎসিত অক্টোপস্‌ জন্তর মতো মনে হয় আপনার, অন্তর থেকে আট্ট! চটচটে পা বের ক'রে আমাকে

« ৭৮ চার অধ্যায়

একদিন অসম্মানে ঘিরে ফেলবে--কেবলি তারি চক্রান্ত করছে। এ'কে তুমি আমার অবুঝ মেয়েলি আশঙ্কা ব'লে হেসে উড়িয়ে দিতে পারো, কিন্তু এই ভয়টা ভূতে- পাওয়ার মতো আমাকে পেয়েছে শুধু আমার জন্যে নয়, তোমার জন্যে আমার আরও ভয় হয়, আমি জানি তোমার দিকে ওর ঈধ্যা সাপের ফণার মতো! ফৌস্‌ ফোস্‌ করছে ।” এএন্লা ওর মতো জন্তদের সাহস নেই, আছে ছূগর্ধ, তাই কেউ ওদের ঘাটাতে চায় নাঁ। কিন্তু আমাকে সর্বান্তঃকরণে ভয় করে, আমি ভয়ঙ্কর বলে যে তা নয়, আমি ওর থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র জাতীয় বলে ।” “দেখো অন্ত, জীবনে অনেক ছুঃখ বিপদের সন্তাবন] আমি ভেবেছি, তার জন্যে প্রস্ততও আছি কিন্তু একদিন কোনে ছৃষ্যোগে যেন ওর কবলে না পড়ি, তার চেয়ে মৃত্যু ভালো ।” অন্তর হত চেপে ধরলে, যেন এখনি উদ্ধার করবার সময় হয়েছে “জানো অন্ত, হিংস্র জন্তর হাতে অপমৃত্যুর কল্পন: কখনো কখনো মনে আসে, তখন দেবতাকে জানাই, বাঘে খায় ভালুকে খায় সেও ভালো, কিন্ত আমাকে

চার অধ্যায় ৭৯,

শাকের মধ্যে টেনে নিয়ে কুমীরে খাবেএ যেন কিছুতে না ঘটে |”

“আমি কি বাঘ ভালুকের কোঠায় না কি?”

“না গো, তুমি আমার নরসিংহ, তোমার হাতে মরণেই আমার যুক্তি। শোনো পায়ের শব্দ উপরে উঠে এলো বলে।”

অতীন্দ্র ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে জোর গলায়। বল্‌লে, এবটু, এখানে নয় চলো নীচে বসবার ঘরে”

বটু বল্লে, “এলা-দি-”

“এলা-দি এখন কাপড় ছাড়তে গেলেন, চলো নীচে |” |

“কাপড় ছাড়তে এত দেরিতে ? সাড়ে আট্টা-_-৮

“হী, হা, আমিই দেরি করিয়ে দিয়েছি ।”

“কেবল একটা কথা | পাঁচ মিনিট ।”

“তিনি স্নানের ঘরে গেছেন। বলে গেছেন, ঘরে কেউ আসে তার ইচ্ছে নয় 1৮ »

“আপনি ?৮

“আমি ছাড়া।”

বটু খুব স্পষ্ট একটা ঠোটর্বাকা হাসি হাস্লে। বল্‌্লে, “আমরা চিরকাল রইলুম ব্যাকরণের সাধারণ

৮০ | চার অধ্যায়

নিয়মে, আর আপনি ছুদিন এসেই উঠে পড়েছেন আর্ধপ্রয়োগে। এক্‌সেপ্শন্‌ পিছল পথের প্রশ্রয়, বেশিকাল সয় না বলে রেখে দিলুম1”-- ব'লে তর্‌ তরু ক'রে নেমে চলে গেল।

ছোটো! একটা করাৎ হাতে দোলাতে দোলাতে অখিল এসে বল্লে, “চিঠি” ওর অসমাপ্ত স্থষ্টিকাজের মাঝখান থেকে উঠে এসেছে

ধুতামার দিদিমণির ?”

“না আপনার আপনারি হাতে দিতে বল্লে।”

2984

“চিনিনে বলেই চিঠিখানা দিয়ে চলে গেল। চিঠির কাগজের লাল রং দেখেই অতীন বুঝলে, এটা 'ডেন্জর্‌ সিগৃম্তাল্‌। গোপন ভাষায় লেখা চিঠি পড়ে দেখলে £--«এলার বাড়িতে আর নয়, তাকে কিছু না জানিয়ে এই মুহূর্তে চলে এসো !”

কন্মের যে-শাসন "স্বীকার ক'রে নিয়েছে তাকে অসম্মান করাকে অতীন আত্মসম্মীনের বিরুদ্ধ বলেই জানে। চিঠিখানা যথারীতি কুটিকুটি ক'রে ছিঃ ফেল্লে। মুহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে দাড়াল রুদ্ধ নাবার ঘরের বাইরে ' পরক্ষণে দ্রতবেগে গেল বেরিয়ে

চার অধ্যায় ৯. ৮১

রাস্তায় দাড়িয়ে একবার দোতলার দিকে তাকালে জানলা খোলা, বাইরে থেকে দেখা যায় আরাম- কেদারার একটা অংশ,আর তার সঙ্গে সংলগ্ন লালেতে হল্দেতে ডোরা-কাটা চৌকো বালিশের এক কোণা। _ নলাফ দিয়ে অতীন চল্তি ট্রাম গাড়িতে চড়ে বস্ল।

ঢং চার অধ্যায় ভুতীল্স অশ্্যান্স

গায়ে গায়ে ঠেসাঠেসি ফিকে-সবুজ গাট-সবুজ হল্দে-সবুজ ত্রাউন-সবুজ রঙের গুল্মে বনস্পতিতে জড়িত নিবিড়তা, বাঁশপাতা-পচা পাকের স্তরে ভঃরে-ওঠা ডোবা; তারি পাশ দিয়ে আকার্বাকা গলি, গোরুর গাড়ির চাকায় বিক্ষত। ওল, কু, ঘেঁটু, মনসা, মাঝে মাঝে আস্সেওড়ার বেড়া ক্ষচিৎ ফাকের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায় আল দিয়ে বাঁধা কচিধানের ক্ষেতে জল দাড়িয়েছে। গলি শেষ হয়েছে গঙ্গার ঘাটে সেকালের ছোটো ছোটো ইট দিয়ে গাথ! ভাঙা ফাটা ঘাট কাত হয়ে পড়েছে, তলায় টর পড়ে গঙ্গা গেছে সারে, কিছুদুরে তীরে ঘাট পেরিয়ে জঙ্গলের মধ্যে একটা! পুরনো ভাঙা বাড়ির অভিশপ্ত ছায়ায় দেড়শো। বছর আগেকার মাতৃহত্যা-পাতকীর ভূত আশ্রয় নিয়েছে বলে জনপ্রবাদ। অনেককাল কোনো সজীব স্বত্বাধিকারী সেই অশরীরীর বিরুদ্ধে আপন দাবী স্থাপনের চেষ্টামাত্র করেনি। দৃশ্যটা এইখানকার পরিত্যক্ত পুরোনো পুজোর দালান, তার সামনে

চার অধ্যায় ৮৩

শ্যাওলা-পড়া রাবিশে এবডড়া খেবড়ো প্রশস্ত আডিনা। কিছুদূরে নদীর ধারে ভেঙেপড়া দেউল, ভাঙা রাসমঞ্চ, প্রাচীন প্রাচীরের ভগ্মাবশেষ, জাঙায় তোলা পাজর বের-করা ভাঙা নৌকো ঝুরি-নামা বটগাছের অন্ধকার তলায়

এইখানে দিনের শেষ প্রহরে অতীনের বর্তমান বাসস্থানে ছায়াচ্ছন্ন দালানে প্রবেশ করল কানাই গুপ্ত চমকে উঠল অতীন, কেননা এখানকার ঠিকান। কানাইয়েরও জানবার কথা ছিল না। |

“আপনি যে!”

কানাই বল্লে, “গোয়েন্দাগিরিতে বেরিয়েছি 1%

“ঠাটটাট। বুঝিয়ে দেবেন |”

“ঠাট্টা নয়। আমি তোমাদের রসদ-জোগানদার- দের সামান্ত একজন। চায়ের দোকানে শনি প্রবেশ করলে; বেরিয়ে পড়লুম। সঙ্গে সঙ্গে চল্ল ,ওদের কুদৃষ্টি। শেষকালে ওদেরি গোয়েন্দার খাতায় নাম লিখিয়ে এলুম। নিমতল! ঘাটের রাস্ত। ছাড়া কোনো রাস্তা নেই যাদের সামনে, তাদের পক্ষে এটা গ্রাপ্ত টরাঙ্ক রোড, দেশের বুকের উপর দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিম পধ্যন্ত বরাবর লম্বমান |”

৮৪ চার অধ্যায়

পচ! বানানে। ছেড়ে খবর বানাচ্ছেন ?”

“বানালে ব্যবসা চলে না। বিশুদ্ধ খাটি খবরই দিতে হয়। যে-শিকার জালে পড়েইছে আমি তার ফাস টেনে দ্রিই। তোমাদের হরেনের সাড়ে পনেরো আন! খবর ওদের কাছে পৌঁছল, শেষ বাহুল্য খবরট। আমি দিয়েছি। সে এখন জলপাইগুড়িতে দরকারী ধর্মশালায় 1৮

"এবার বুঝি আমার পালা 1”

“ঘনিয়ে এসেছে কাজ অনেকখানি এগিয়ে এনেছে বটু। আমার অংশে যেটুকু পড়ল তাতে কিছু সময় পাবে। সাবেক বাসায় থাক্‌তে হঠাৎ তোমার ডায়ারি হারিয়েছিল। মনে আছে ?”

দখুব মনে আছে”

“সেটা পুলিশের হাতে নিশ্চিত পড়ত, কাজেই আম্কেই চুরি করতে হোলো ।”

“আপনি |” ৭.

“হা, সাধু যার সঙ্কল্প ভগবান তার সহায় একদিন সেটা লিখছিলে, আমারই কৌশলে সরে গেলে প'ঃ মিনিটের জন্যে সেই সময়ে সরিয়েছি 1৮

অতীন মাথায় হাত দিয়ে বল্লে,“সবট পড়েছেন ?”

চার অধ্যায় ৮৫

“নিশ্চিত পড়েছি পড়তে পড়তে রাত হয়ে গেল দেড়টা | বাংলা" ভাষায় এত তেজ এত রস তা আগে জানতুম না। ওর মধ্যে গোপনীয় কথা আছে বই কী। কিন্তু সেট! ব্রিটিশসাভ্রাজ্য সম্পর্কে নয়”

“কাজটা কি ভালো করেছেন ?” |

“কত ভালো করেছি তা বলতে পারিনে। তুমি সাহিত্যিক, তুমি সমস্ত খাতায় খুঁটিনাটি কথা কিছু লেখোনি, কারো নাম পধ্যস্ত নেই। কেবল ভাবের দিক থেকে এত দ্বণা এত অশ্রদ্ধা, যে, তা কোনো পেন্সন- ভোগী মন্ত্রীপদপ্রার্থীর কলম দিয়ে বেরোলে রাজদরবারে তার মোক্ষলাভ হোতো | বট্র যদি তোমার সঙ্গে না লাগত তা হোলে খাতাখানাই তোমার গ্রহ স্বস্ত্যয়নের কাজ করত ।”

“বলেন কী! সবটাই পড়েছেন ?”

“পড়েছি বৈ কী। কী বলৃব বাবাজি, আমার যদি মেয়ে থাকত আর এমন লেখা যদি সে তোমার কলম থেকে বের করতে পারত তা হোলে সার্থক মানতুম আপন পিতৃপদকে। সত্যি কথা বলি, তোমাকে দলে জড়িয়ে ইন্দ্রনাথ ভায়া দেশের লোকসান করেছেন ।৮

“আপনার এই ব্যবসার কথা দলের সবাই জানে ?”

৮৬ চার অধ্যায়

“কেউ না।”

“মাষ্টারমশায় ?”

“বুদ্ধিমান, আন্দাজ করতে পারেন কিন্তু আমাকে জিজ্ঞাসাও করেন নি, শোনেন নি আমার মুখ থেকে ।”

“আমাকে বল্লেন যে!”

“এইটেই আশ্যধ্য কথা আমার মতো সন্দেহজীবী মানুষ কাউকে যদি বিশ্বাস না করতে পারে তাহোলে দম আটকে মরে। আমি ভাবুক নই, বোকাও নই, তাই ডায়ারি রাখিনে, যদি রাখতুম তোমার হাতে দিতে

পারলে মন খোলসা হোতো 1” .. ধমাষ্টার মশায়--”

“মাষ্টার মশায়ের কাছে খবর দেওয়া চলে কিন্তু মন খোলা চলে না ইন্দ্রনাথের প্রধান মন্ত্রী আমি, কিন্তু তার সব কথা! আমি যেজানি তা মনেও কোরো না। এমন কথা আছে য। আন্দাজ করতেও সাহস হয় না। আমার বিশ্বাস, আমাদের দলের যারা আপনি ঝরে পড়ে, ইন্দ্রনাথ আমার মতোই তাদের ঝেটিয়ে ফেলে পুলিসের পাঁশতলায়। কাজটা গঠিত কিন্তু নিষ্পাপ। ব'লে রাখছি, একদিন ওরি বা আমারি সাহায্যে তোমার হাতে শেষ হাতকড়ি পড়বে, তখন কিছু মনে

চাঁর অধ্যায় ৮৭

কোরো! না যেন। তোমার বাড়িতে আসার খবর _বটুই প্রথম থানার কানাকানি-বিভাগে জানিয়েছে। কাজেই আমাকে টেক্কা দিতে হোলো” ফোটোগ্রাফ তুলে ওদের কাছে দিয়েছি। এখন কাজের কথা বলি। চবিবশ ঘণ্টা তোমাকে সময় দিচ্চি, তার পরেও যদি এখানে থাকে তা হোলে আমিই তোমাকে থানার পথে এগিয়ে দেব। এখান থেকে কোথায় যেতে হবে সবি- স্তারে তার রাস্তাঘাট এই লিখে দিয়েছি--এর অক্ষর তোমার জানা আছে, তবু মুখস্থ করেই ছিড়ে ফেলো এই দেখো ম্যাপ। রাস্তার পাশে তোমার বাস, ইস্কুল বাড়ির কোণের ঘরে। ঠিক সামনে পুলিশের থানা। সেখানে আছে আমার কোনো এক সম্পর্কে নাতি, রাইটর্‌ কনষ্টেবল্‌, তাকে রাঘব বোয়াল বলি। তিনপুরুষে পশ্চিমে বাম। বাংলা পড়াবার মাষ্টারি পেয়েছ তুমি সেখানে গেলেই রাঘব ছোমার তোরঙ্ষ শ্বাটবে, পকেট ঝাড়া দেবে, গুঁতোগাতাও দিতে পারে সেইটেকেই ভগবানের দয়া বলে মনে কোরো বাঙালী মাত্রই যে শ্ালকসন্প্রদায়তৃক্ত এই তত্বটি রঘুবীরের হিন্দীভাষায় সর্বদাই প্রকাশ পেয়ে থাকে তুমি তার (কোনো প্রকার রূঢ় প্রতিবাদের চেষ্টামাত্র কোরো না

৮৮ চার অধ্যায়

প্রাণ থাকতে দেশে ফিরে এসো না। বাইসিকৃল্টা। রষ্টল বাইরে। ইসারা যখনি গ্রাবে সেই মুহুর্তে চ'ড়ে বোসো। এসো বাবাজি, শেষ দিনের মতো কোলাকুলি করে নিই 1”--কোলাকুলি হয়ে গেলে চলে গেল কানাই।

অতীন চুপ করে বসে রইল। তাকিয়ে দেখতে লাগল অন্তরের দিকে। অকালে এসে পড়ল তার জীবনের শেষ অঙ্ক, যবনিকা আসন্ন পতনমুখী, দীপ নিবে এসেছে। যাত্রা মারন্ত হয়েছিল নিম্মল ভোরের আলোয় ; সেখ।ন থেকে আজ অনেক দূরে এসে পড়েছে। পাথ পা বাড়াবার সময় যে পাথেয় হাতে ছিল, তার কিছুই বাকী নেই ;'পথের শেষ ভাগে নিজেকে কেবলি ঠকিয়ে খেয়েছে ; কদিন হঠাৎ পথের একটা বাকের মুখে সৌন্দর্যের যে আশ্চর্য দান নিয়ে ভাগ্যলক্ষ্মী তার সামনে ঈ্ীড়িয়েছিল সে যেন অলৌকিক ; তেমন অপরিসীম এশ্বধ্য প্রতাক্ষ হবে ওর জীবনে, সে কথা৷ এর আগে কখনোই সম্ভব ব'লে ভাবতে পারেনি, কেবল তার কল্পরূপ দেখেছে কাবো ইতিহাসে বারে- বারে মনে হয়েছে দাস্তে বিয়াত্রিচে নূতন জন্য নিল ওদের দুজনের মধ্যে সেই এতিহাসিক প্রেরণা ওর মনের

চার অধ্যায় ৮৯

ভিতর কথা কয়েছে, দান্তের মতোই রাষ্্ীয় বিপ্লবের আবর্তের মধ্যে অতীন থড়েছিল ঝাপ দিয়ে, কিন হার সতা কোথায়, বীর্য কোথায়, গৌরব কোথায়, দেখতে দেখতে অনিবাধ্য বেগে যে পাকের মধ্যে ওকে টেনে নিয়ে এল সেই মুখোষপরা চুরি-ডাকাতি খুনোখুনির অন্ধকারে ইতিহাসের আলোকস্তম্ত কখনো উঠবে না শাআ্বার সর্বনাশ ঘটিয়ে অবশেষে আজ সে দেখছে কোনা যথার্থ ফল নেই এতে, নিঃসংশয় পরাভক সামনে পিরাভবেরও মূল্য আছে কিন্তু আত্মার পরাভবের নয়, যে-পরাভব টেনে আনল গোপনচারী বীভৎস বিভীষিকায়, যার অর্থ নেই; যার অগ্ত নেই।

দিনের আলো যান হয়ে এল, ঝি ঝি পোকার ডাক উঠেছে প্রাঙ্গণে, কোথায় গোরুর গাড়ি চলেছে তার আর্বম্বর শোন। যায়।

হঠাৎ ঘরের মধ্যে দ্রুতপদে এসে পড়ল এলা, আত্মহত্যার জন্যে এক বৌকে মানুষ জলে পড়ে যেমন ভাবে তেমনি আলুথালু অন্ধবেগে। অতীন লাগ দিয়ে দাড়িয়ে উঠতেই তার বুকের উপর সে ঝাপিয়ে পড়ল। বাম্পরুদ্ধত্বরে বলতে লাগল,“অতীন্, অতীন্, পারলুম না থাকাতে |” |

৪০ চার অধ্যায়

অতীন ধীরে ধীরে ওকে ছাড়িয়ে নিয়ে সামনে সরিয়ে ধরে ওর অশ্রুসিক্ত মুখের দিকে তাকিয়ে রইল

বল্লে, “এলী, কী কাণ্ড করলে তুমি ?”

সে বললে, “কিছু জানিনেষ্ঠ কী করেছি

«এ ঠিকানা কেমন করে জানলে ?”

এলা গভীর অভিমানে বললে, «তোমার ঠিকানা তুমি,তে। জানাওনি.

“ধে ভোমাকেক্ট্রীনিয়েছে সে তোমার বন্ধু নয় ।”

“তাও আমি নিশ্চিত জানি কিন্তু তোমার কোনো পথ না জানতে পারলে শুন্যে শুন্যে মন ঘুরে বেড়ায়, অসহ্য হয়ে উঠে। শক্র মিত্র বিচার করবার মতো অবস্থা আমার নয়।' কতকাল তোমাকে দেখিনি বলো দেখি !” |

ধন্য তুমি !”

“তুম ধন্য অন্ত! যেমনি আমার বাড়িতে আস! নিষেধ হোলো অমনি সেট! তো মেনে নিতে পারলে রা

“ওটা! আমার স্বাভাবিক স্পর্দা। প্রচণ্ড ইচ্ছে আমাকে অজগর সাপের মতা দিনরাত পাক দিয়ে দিয়ে পিষেছিল তবু তাকে, মানতে পারলুম না ওরা আমাকে বলে সেন্টিমেপ্টাল, মনে ঠিক করে রেখেছিল

চার অধ্যায় | ৯১

সঙ্কটের সময় প্রমাণ হবে আমি ভিজে মাটিতেই তৈরি। ওরা ভাবতেই পারে না সেন্টিমেন্টেই আমার অমোঘশক্তি |”

“মাষ্টার মশায়ও তা দ্গানেন।৮

“এলী, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে এই ভূতুড়ে পাড়া সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে আজ পধ্যস্ত কোনো বাঙালী ভদ্র- মহিল1 এই জায়গাটার স্বরূপ নির্ধীরণ করেনি ।” ,

“তার কারণ, বাংলাদেশের কোনো ভদ্রমহিলার অদৃষ্টে এতবড়ো গরজ এমন ছুঃসহ হয়ে কোনোদিন প্রকাশ পায়নি ।”

“কিন্তু এলী,আজ তুমি যে কাজ করলে সেট। অবৈধ 1”

“জানি সে কথা, মান্ধ আমার দূর্বলতা, তবু ভাব নিয়ম, শুধু নিজের হয়ে না, তোমার হয়েও প্রতিদিন আমার মন বলেছে তুমি ডাকছ আমাকে সাড়া দ্রিতে পারিনে ঝলে-যে প্রাণ হাপিয়ে উঠে। বলো, আমি এসেছি বলে খুসি হয়েছ !” |

“এত খুসি হয়েছি যে তা প্রমাণ করবার জন্তে বিপদ স্বীকার করতে রাজি আছি ।”

“নী, না, তোমার কেন হবে বিপদ! যা হয় তা আমার হোকৃ। তা হোলে আমি যাই অন্ত।”

৯২ | চার অধ্যায়

“কিছুতেই না। তুমি নিয়ম ভেঙে চলে এসেছ, আমি নিয়ম ভেঙে তোমাকে ধারে রাখব ছুজনে মিলে অপরাধ সমান করে নেওয়া যাক। নতুন বিশ্ময়ের বসন্তী রঙে একদিন দেখেছিলুম তোমার মুখ, সে আজ যুগান্তরে পিছিয়ে গেছে। আজ সেই দিনটিকে আবাহন করা যাক এই পোড়ো ঘরটার মধ্যে এসো, আরো কাছে ।?

“রোসো, ঘরটা একটুখানি গুছিয়ে নেবার চেষ্টা, করি |”

“হায়রে, টাকের মাথায় চিরুণী চালাবার চেষ্টা!

এলা একবার চারিদিক ঘুরে দেখলে মেঝের উপর কম্বল, তার উপর চা্টাই। বালিশের বদলে বই দিয়ে ভরা একটা পুরোনো ক্যান্থিসের থলি লেখা- পড়া করবার জন্যে একখান প্যাক্বাক্স | কোণে জলের কলসী মাটির ভাড় দিয়ে ঢাকা জীর্ণ চাঙারিতে এক ছড়া কলা, তার মধ্যে এনামেল-উঠে-যাওয়া একখানা বাটি, দৈবাৎ সুযোগ ঘটুলে চা খাওয়া! চলে। ঘরের অন্য প্রান্তে একটা বড়ো চওড়া সিন্ধুক, তার উপরে গণেশের একটি মাটির মৃত্তি। তার থেকে প্রমাণ হয়, এখানে অতীনের কোনো এক দোসর আছে। এক

চার অধ্যায় পু সি রে | ৯৩

থাম থেকে আর এক থাম পর্য্যন্ত দড়ি খাটানো, তাতে নানা" রঙের ছোপ-লাগা অনেকগুলে! ময়লা গামছ।। স্যাংসেতে ঘরে শ্বীসরুদ্ধ আকাশের বাম্পঘন গন্ধ ঠিক এমন না হোক্‌ এই জাতের দৃশ্য এলা দেখেছে মাঝে মাঝে। কখনো বিশেষ ছুঃখ পায়নি, বরঞ্চ ত্যাগ-বীর ছেলেদেরকে মনে মনে বাহাছুরী দিয়েছে একদা এক জঙ্গলের ধারে দেখেছিল অনিপুণ হাতে রান্নার চেষ্টায় পোড়ো। চালের খড়-বাখারি জ্বালানে। চুলোর ভশ্মাবশেষ ; মনে হয়েছিল রাষ্ট্রবিপ্লবী রোমান্সের একটা অঙ্গারে আকা ছবি। আজকিন্তু কষ্টে ওর রুদ্ধ হয়ে এলে! আরামের বাহুবেষ্টনে ঘেরা ধনীর ছেলেকে অবজ্ঞ! করাই এলার অভ্যান্ত। কিন্তু অতীনকে এই অপরিচ্ছন্ন মলিন শভাবজীর্ণ অকিঞ্চনতার মধ্ো কিছুতে ওর মন মিশ খাওয়াতে পারে না! এলার উদ্দিগ্র মুখ দেখে অতীন হেসে উঠল, বল্‌লে, “আমার রশবর্ধ্য দেখছ স্তস্তিত হয়ে। তার যে বিরাট ংশট1 দেখা যাচ্চে না, সেইটেতেই তুমি বিস্মিত। আমাদের পা খোলস! রাখতে হয়--দৌড় মারসার সময় মানুষও পিছু ডাকে না, জিনিষ পত্রও না। কিছুদুরে পাটকলের মজুরদের বস্তি, তারা আমাকে মাষ্টারবাবু

৯8 | চা 'অধ্যা় বলে ডাকে। চিঠি পড়িয়ে নেয়, ঠিকানা লিখিয়ে নেয়, বুঝিয়ে নেয় দেনা পাওনার রসিদ ঠিক হোলো কি না। এদের কোনো কোনো সন্ভানৰংসলার সখ, ছেলেকে একদিন মজুরশ্রেণী থেকে হজুর শ্রেণীতে ওঠাবে। আমার সাহাযা চায়, ফলফুলুরি দেয় এনে, কারো বা ঘরে গোরু আছে ছুধ জুগিয়ে থাকে” |

“অন্ত, কোণে যে সিন্ধুক আছে ওটা কার সম্পত্তি ?”

“অজায়গায় একল। থাকলেই বেশি করে চোখে পড়তে হয়। অলক্্মীর ঝাটার মুখে রাস্তার থেকে এসে পড়েছে এই ঘরটাতে-মাড়োয়ারি, তৃতীয় বারকার দেউলে। আমার সন্দেহ হচ্চে দেউলে হওয়াই ওর সর্বপ্রধান ব্যবসা ।' এই 'পোড়ো দ্ালানট। ওর ছুজন ভাইপোর ট্রেনিং একাডেমি তারা ভোরবেলায় ছাতু খেয়ে কাজ করতে আসে, বস্তির মেয়েদের জন্যে সম্তাদামের কাপড় রডায়, বেচে মূলধনের সুদ দেয়, আসলেরও কিছু কিছু শোধ করে। যে মাটির গামলাগুলে। দেখছ, আমি আমার যজ্জছের রান্নায় ব্যবহার করিনে; ওগুলোতে রং গোলা হয়। কাপড়গুলে। তুলে রেখে যায় এ. বাক্সের ভিতর, তা ছাড়া ওতে আছে,

চার অধ্যায়. ০05 ৯০ আট

বস্তির মেয়েদের প্রসাধনষোগ্য নানা জিনিষ 7 বেলোয়ারি চুড়ি চিরুণী ছোটে! আয়না পিতলের বাজু। রক্ষা করবার ভার আমাঁর উপর ন্যার প্রেতাত্মার উপর। বেল। তিনটের সময় সওদ করতে বেরোয়, এখানে আর ফেরে না। কলকাতায় মাড়োয়ারি জানিনে কিসের দালালী করে। আমার ইংরেজি জানার লোভে আমাকে অংশীদার করতে চেয়েছিল, জীবের প্রতি দয়া করে রাজি হইনি। আমার আথিক অবস্থারও সন্ধান নেবার চেষ্টা ছিল, বুঝিয়ে দিয়েছি পূর্বপুরুষের ঘরে যা ছিল মজুদ আজ তারি চোদ্দ আনা ওদেরি পূর্বপুরুষের ঘরে জন্মান্তরিত।”

“এখানে তোমার মেয়াদ কতদিনের ?”

“আন্দাজ করছি চবিবিশ ঘণ্ট! |" আডিনায় রসে- বিগলিত নানা রঙের লীলা সমানে চলবে দিনের পর দিন, অতন্দ্র বিলীন হয়ে যাবে পারুবর্ণ দূর দিগন্তে আমার ছেণয়াচ লেগেছে যে-মাড়োয়ারিকে তাকে বেড়ি-পরা মহামারীতে না পায় এই আমি কামনা করি। এখনো বিন! যূল-ধনে আমার ভাগ্যভাগী হবার সম্ভাবনা! যে তার নেই তা বল্‌্তে পারিনে 1৮

«তোমার ভবিষ্যৎ ঠিকানাট। ?”

৪৯৬ চার অধ্যায়

পুকুম নেই বল্বার |”

“তা হোলে কি কল্পনাও করতে পারব না তুমি আছ (কোথায় 4

“কল্পনা করতে দোষ কী। মানস সরোবরের তীরট! ভালো জায়গা ।”

ইতিমধ্যে ঝুলির ভিতর থেকে বইগুলো বের করে এল৷ উল্টে পাল্টে দেখছে কাব্য, তার কিছু ইংরেজি, আর ছুই একখানা বাংলা

অতীন বললে, “এতদিন ওগুলো বয়ে বেড়িয়েছি পাছে নিজের জাত ভুলি। ওরি বাণীলোকে ছিল আমার আদি বসতি। পাতা খুললেই পেন্সিলে চিহ্নিত তার রাস্তা গলির নির্দেশ পাবে আর আজ! এই দেখো চেয়ে !?

এলা হঠাৎ মাটিতে লুটিয়ে অতীনের পা জড়িয়ে ধরলে বললে,মাপ করো, অন্ত, আমাকে মাপ করো”

“তোমাকে মাপ করবার কী আছে এলী? ভগবান যদি থাকেন, তার যদি থাকে অসীম দয়! তবে তিনি যেন আমাকে মাপ করেন ।”

“যখন তোমাকে চিনতুম না তখন তোমাকে এই রাস্তায় দাড় করিয়েছি |

চার অধ্যায় ৯৭

অত্তীন হেসে উঠে বল্‌লে, “নিজেরই পাগলামির ফুল্‌ স্ীমে এই অস্থানে পৌচেছি সে খ্যাতিটুকুও দেবে না আমাকে? আমাকে নাবালকের কোঠায় ফেলে অভিভাবকগিরি করতে এলে আমি সইব না বলে রাখছি। তার চেয়ে মঞ্চ থেকে নেমে এসো ; আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলো__এসে। এসে! বধু এসো আধো আচরে বোসে।।” রর

“হয়তো বলতুম কিন্তু আজ তুমি এমন করে ক্ষেপে উঠলে কেন £”

“ক্ষেপব না? বল্লে কিনা ভূজ-মুণালের জোরে তুমি আমাকে পথে বের করেছ!”

“সত্যি কথা বললে রাগ করে। ₹ুকন ?”

“সত্যি কথা হোলো? আমি ছিটকে পড়েছি রাস্তায় অন্তরের বেগে, তুমি উপলক্ষ্য মাত্র। ভন্থ কোনো শ্রেণীর বঙ্গ মহিলাকে উপলক্ষ্য পেলে এতদিনে গোরা-কালা-সম্মিলনী ক্লাবে ব্রিজ খেল্‌তে যেতুম, ঘোড় দৌড়ের মাঠেগবর্ণরের বক্সের অভিমুখে ন্বর্গারোহণ পর্বের সাধনা করতুম। যদি প্রমাণ হয় আমি মৃঢ় তবে জীক করে বলব সে মুঢ়তা স্বয়ং আমারি, যাকে বলে ভগবন্ধত্ত প্রতিভা ।৮

৯৮ চার অধ্যায়

“অন্ত, দোহাই তোমার, আর বাজে বকুনি বোকো না! তোমার জীবিকা আমিই ভাসিয়ে দিয়েছি ছুঃখ কখনো! ভুলতে পারব না। দেখতে পাচ্চি তোমার জীবনের মূল গেছে ছিন্ন হয়ে।”

“এতক্ষণে সেই মেয়ের প্রকাশ হোলো, যে-মেয়েটি রিয়ল। একটুতেই ধরা পড়ে দেশোদ্ধারের রঙগমঞ্চে তুমি রোম্যার্টিক। যে-সংসারে কাসার থালায় ছুধ ভাত'মাছের মুড়ো তারি কেন্দ্রে বসে আছ তালপাতার পাখা হাতে। যেখানে পোলিটিক্যাল ঠ্যাঙার গুঁতি সেখানে আলু-থালু চুলে চোখ ছুটো৷ পাকিয়ে এসে পড়ো অপ্রকৃতিস্থতার ঝোকে, সহজবুদ্ধি নিয়ে নয়।”

“এত কথাও খ্বলতে পারো, অন্ত, মেয়েমানুষও তোমার কাছে হার মানে |?

£মেয়েমানষ কথা বলতে পারে না কি! তারা তো শুধু বকে। কথার টর্ণেডো দিয়ে সনাতন মৃঢ়তার ভিৎ ভাঙউব ঝলে একদিন মনের মধ্যে ঝোড়ো মেঘ জমে উঠেছিল। সেই মুঢ়তার উপরেই তোমাদের জয়সতস্ত সাথতে বেরিয়েছ কেবল গায়ের জোরে ।”

“তোমার পায়ে পড়ি স্তামাকে বুঝিয়ে দাও আমার

চার অধ্যায় | ডা

ভুলে. তুমি ভুল কেন করলে? কেন নিলে জীবিকা- বর্জনের ছুঃখ ?” | “ওটা আমার ব্যগ্তীনা, ইংরেজিতে যাকে বলে জেস্চার। ওটা আমার নিদেন কালের ভাষা যদি ছুঃখ না মানতুম তা হোলে মুখ ফিরিয়ে চলে যেতে, কিছুতে বুঝতে না তোমাকে কতখানি ভালোবেসেছি। সেই কথাট। উড়িয়ে দ্রিয়ে বোলো! না ওটা! দেশকে ভালোবাসা !” “দেশ এর মধ্যে নেই অন্ত ?” | “দেশের সাধনা আর তোমার সাধন। এক ভয়েছে বলেই দেশ এর মধ্যে আছে একদিন বীষ্যের জোরে যোগ্যতা দেখিয়ে পেতে হোতো! মেয়েকে আজ সেই মরণপণের স্থযোগ পেয়েছি - মে কথাট! ভূলে সামান্য আমার জীবিকার অভাব নিয়ে তোমার বাথা লেগেছে অন্নপূর্ণা !” “আমরা মেয়েরা সাংসারিক। সংসারে অকুলোন সইতে পারিনে আমার একটা কথা তোমাকে রাখতেই হবে। আমার আছে পেতৃক বাড়ি, আরো আছে কিছু জম! টাকা দোহাই তোমার, বার বার দোহাই দিচ্চি, কথা৷ রাখো, আমার কাছে টাক নিতে সন্কোচ কোরো! না। জানি তোমার খুবই দরকার 1৮

1

১০৩ / চার অধ্যায়

খুবই দরকার পড়লে ম্যাট ট্রকুলেশনের নেট বই লেখ! থেকে আরম্ভ ক'রে কুলিগিরি পর্যন্ত খোলা রয়েছে ।”

“আমি মান্ছি, অন্ত, আমার সমস্ত জমা টাকা দেশের কাজে এতদ্রিনে খরচ করে ফেলা উচিত ছিল। কিন্তু উপার্জনে আমাদের স্বযোগ কম বলেই সঞ্চয়ে আয়াদের অন্ধ আসক্তি। ভীতু আমর1।”

“৬টা তোমাদের সহজ বুদ্ধির উপদেশ নিঃসম্বল- তায় মেয়েদের শ্রী নষ্ট হয়।”

“আমাদের ছোটো. নীড়, সেখানে টুকিটাকি কিছু আমরা জমা করি। কিন্তু সে তো কেবল বাঁচবার প্রয়োজনে নয, ভালোবাসবার প্রয়োজনে আমার যা কিছু সমস্তই তেঃ+মার জন্যে, কথা! যদি বুঝিয়ে দিতে পারি তাহোলে বাঁচি।”

. পাঁকছুতেই বুঝব না ওকথাটা। আজ পর্যন্ত মেয়েরা জুগিয়েছে সেবা, পুরুষরণ জুগিয়েছে জীবিকা তার বিপরীত ঘট.লে মাথা হেট হয়। যে-চাওয়া নিষে অসস্কোচে তোমার কাছে হাত পাততে পারি তাকে ঠেকিয়ে দিয়ে তুমি পণের বাধ বেঁধেছ। সেদিন নারা- যণী ইন্কুলের খাতা নিয়ে হিসেব মেলাচ্ছিলে। বসে

চার অধ্যায় ক. 2০ নি

পড়লুম কাছে, ঝাড়ের ঘা খেয়ে চিল যেমন ধুলায় পড়ে তেমনি মার-খাওয়। মন নিয়ে এসেছিলুম। কর্তব্যের যেমন-তেমন একট। ছাপমারা জিনিষে মেয়েদের নিষ্ঠা পাণ্ডার পায়ে তাদের অটল ভক্তির মতোই, ছাড়িয়ে নেওয়া অসম্ভব মুখ তুলে চাইলে না। বসে বসে এক দৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে ইচ্ছা করছিলুম ওই সুকুমার আঙুলগুলির ডগা দিয়ে স্পর্শসুধা পড়ুক ঝরে আমার দেহে মনে। দরদ লাগল না তোমার কোনো খানেই ; কৃপণ, সেটুকুও দিতে পারলে না! মনে মনে বললুম, আরো! বেশি দাম দিতে হবে বুঝি। একদিন ফাটা মাথা কাটা দেহ নিয়ে পড়ব মাটিতে, তখন ভেডে-পড়া প্রাণটাকে নেবে তোমার কোলে তুলে ।”

এলার চোখ ছলছলিয়ে এলো, বল্লে, “আঃ তোমার সঙ্গে পারিনে, অন্ত! এটুকু না চেয়ে নিতে পারলে না? কেড়ে নিলে না কেন আমার খাতা ? বুঝতে পারো না, তোমারি সঙ্কোচ আমাকে সন্কুচিত করে। অস্ত, তোমার স্বভাব এক জায়গায় মেয়েদের মতো ইচ্ছে থাঁকতে পারে প্রবল কিন্তু উদ্দামভাবে তার দাবী প্রকাশ করতে তোমার রুচিতে ঠেকে 1”

“বংশগত ধারণা, ছেলেবেল। থেকে রস্তে মাংসে

৯০২, চার অধ্যায়

জড়ানো বরাবর ভেবে এসেছি মেয়েদের দেহে মনে একটা শুচিতার মর্ধযাদা আছে; তাদের দেহের সম্মানকে সশঙ্কচিত্তে রক্ষা করা আমাদের পূর্বপুরুষগত অভ্যাস। আমার কুষ্টিত মনকে একট্মাত্র প্রশ্রয় দেবার জন্তে তোমার মন যদি কখনো আর্দ্র হয় তবে আমার পক্ষ থেকে ভিক্ষে চাইবার অপেক্ষা কোরো না। আমি শিখিনি তেমন করে চাইতে ক্ষুধার সীমা নেই, তাই ঝলে,পেটুক হোতে পারব না, ওটা আমার ধাতে নেই আমার 'কামনার কৌলীন্ত নষ্ট করতে পারিনে 1”

এল! অতীনের কাছে এসে ঘেঁসে বসল, তার মাথা বুকে টেনে নিয়ে তার 'উপরে নিজের মাথা হেলিয়ে রাখলে কখনো কখনো আস্তে আস্তে চুলের মধ্যে আঙুল বুলিয়ে দিতে লাগল। কিছুক্ষণ পরে অতীন মাথা তুলে বসে এলার হাত চেপে ধরলে বললে, “যেদিন মোকামায় খেয়াজাহাজে চড়েছিলুম সেদিন ভাগাযদেবী পিতামহী অনৃশ্ত হাতে কান মলে দিয়ে গেলেন তা বুঝতে পারিনি | তার অনতিকাল পর থেকেই মনটা কেবল আকাশ-কুন্ুম চয়ন করে বেড়াচ্ছে স্মৃতির আকাশে সেদিনের কথা তোমার কাছে পুরোনো হয়েছে কি?”

চার অধ্যায় ১০৩.

«একটুও না”

“তাহোলে শোনো। ভারী মাল নীচের ডেক্‌ থেকে গাড়িতে নিযে গেছে আমার বিহারী চাকরটা। কাছে ছিল ছোটে! একটা চামড়ার কেস্--এদিক ওদিকে তাকাচ্চি কুলির অপেক্ষায় নেহাৎ ভালো মানুষের মতো হঠাৎ কাছে এসে বল্লে, কুলি চান? দরকার কী! আমি নিচ্চি।--হা হা করেন কী, করেন কী বলতে বলতেই সেট! তুলে ফেললে আমার বিপত্তি (দখে যেন পুনশ্চ নিবেদনে বললে, সন্কোচ বোধ করেন তো। এক কাজ করুন, আমার বাক্সেটা আছে তুলে নিন, পরম্পর খণ শোধ হয়ে যাবে ।- তুলতে হোলো আমার ফেসের চেয়ে সাতগ্ুণ ভারী। হাতলট। ধরে ডান হাতে বা হাতে বদল করতে করতে টলতে টলতে রেলগাড়ির র্ভক্লাস কামরায় টেনে তুললেম। তখন সিক্ষের জামা ঘামে ভিজে, নিশ্বাস দ্রুত, নিস্তব্ধ অটহাস্তয তোমার মুখে। হয়তো বা করুণা কোনো একটা জায়গায় লুকোনো ছিল, সেটা প্রকাশ করা অকর্তৃব্য মনে করেছিলে সেদিন আমাকে মানুষ করার অহৎদায়িত্ব ছিল তোমারি হাতে ।”

“ছী ছী, বোলোনা, বোলোনা, মনে করতে লজ্জা

১০৪ চার অধ্যায়

বোধ হয়। কী ছিলুম তখন, কী বোকা, কী অদ্ভুত! তখন তুমি হাঁসি চেপে রাখতে বলেই আমার স্পর্্। বেড়ে গিয়েছিল। সহা করেছিলে কী করে ? মেয়েদের কি বুদ্ধি থাকবার কোনো দরকার নেই ?”

“থাক্‌ বানা থাক্‌ তাতে তো কিছু আসে যায়নি। সেদিন যে-পরিবেষের মধ্যে আমার কাছে দেখা দিয়েছিলে সে তো হায়ার ম্যাথম্যাটিকৃস্‌ নয়,লজিক নয়। সেট] যাকে বলে মোহ শঙ্করাচাধ্যের মতো মহামল্লুও যার উপর মুদগরপাত করে একটু টোল খাওয়াতে পারেননি তখন বেল! পড়ে এসেছে, আকাশে, যাকে বলে কনে-দেখ! মেঘ। গঙ্গার জল লাল আভায় টলটল করছে। ছিপছিপে ক্ষিপ্রগমন শরীরটি সেই রাঙা আলোর ভূমিকায় চিরদিন আকা রয়ে গেল আমার মনে। কী হেলে তার পরে? তোমার ডাক শুনলুম কানে। কিন্তু এসে পড়েছি কোথায়? তোমার থেকে কতদুরে ! তুমিও কি জানো তার সব বিবরণ ?”

“আমাকে জানতে দাও না কেন অন্ত ?”

“বারণ মানতে হয়। শুধু তাই কি? কী হবে সব কথা ঝলে?--আলো কমে গিয়েছে এসো

চার অধ্ায় ১০৫

আরো কাছে এসো আমার চোখ ছুটো৷ এসেছে. ছুটির'দ্রবারে তোমার কাছে। একমাত্র তোমার কাছেই আমার ছুটি। অতি ছোটো! তার আয়তন, সোনার জলে রাঙানো ফ্েমের মতো তারি মধ্যে ছবিটিকে বাধিয়ে নিইনে কেন? যে তোমার. ছুইএকগুছি অশিষ্ট চুল আলগা হয়ে চোখের উপর এসে পড়েছে, দ্রুত হাতে তুলে তুলে দিচ্চ; কালো পাড়-দেওয়া তসরের সাড়ি, ব্রোচ নেই কাধে, আচলট। মাথার চুলে বিধিয়ে রাখা, চোখে ক্রান্ত ক্রেশের ছায়া, ঠোঁটে মিনতির আভাস, চারিদিকে দিনের আলো ডুবে এসেছে শেষ অস্পষ্টতায়। এই য। দেখছি এইটিই আশ্ধ্য সত্য, এর মানে কী, কাউকে বুঝিয়ে বলতে পারব না, কোনো এক অদ্বিতীয় কবির হাতেই ধরা দিতে পারল না বলে এর অব্যক্ত মাধুষ্যের, মধ্যে এত গভীর বিষাদ। এই ছোটো একটি অপরূপ পরিপূর্ণতাকে চারদিকে ভ্রকুটি ক'রে ঘিরে আছে বড়ো নামওয়াল। বড়ো ছায়াওয়াল। বিকৃতি

“কী বল্ছ, অন্ত |”

“অনেকখানি মিথ্যে মনে পড়ছে কুলি-বস্তিতে

১০৬. মা চার অধ্যায়

আমাকে বাসা নিতে বলেছিলে তোমার মনের মধ্যে ছিল আমার বংশের অভিমানকে ধুলিসাৎ করবার অভিপ্রায়! তোমার সেই ম্মতৎ অধ্যবসায়ে আমার মজা লাগল। ডিমক্রাটিক পিকৃনিকে নাবা গেল। গাড়োয়ান-পাড়াতে ঘুরলুম। দাদ খুড়োর সম্পর্ক পাতিয়ে চললুম বহুবিধ মোষের গোয়ালঘরের পাশে পাশে। কিন্তু তাদেরও বুঝতে বাকি ছিল না, আমারও নয়'যে এই সম্পর্কের ছাপগুলো ধোপ সইবে না। নিশ্চয় এমন মহৎ লোক আছেন সব যাণ্রেই ধাদের সুর বাজে, এমন কি, তুলো-ধোনা যন্ত্রেত। আমর! নকল করতে গেলে স্বর মেলে না। দেখোনি তোমাদের পাড়ার খুষ্টশিষ্কে, ব্রাদার ঝ'লে যাকে তাকে বুকে চেপে ধরা তার অনুষ্ঠানের অঙ্গ এতে খুষ্টকে ব্যঙ্গ করা হয়।” “কী হয়েছে তোমার অন্ত! কোন ক্ষোভের মুখে এসব কথা বল্ছ? তুমি কি বল্তৈঃচাও কর্তব্যকে কর্তব্য বলে মান! যায় না অরুচি কাটিয়ে দিয়েও ?” “রুচির কথ! হচ্চে না এলী, স্বভাবের কথা শ্রীকৃষ্ণ ভাঙ্ঘনকে বীরের কর্তব্ই করতে বলেছিলেন অত্যন অরুচি সাত্বেও; কুরুক্ষেত্র চাষ করবার উদ্দেশে এগ্রি- কাল্চারাল ইকনঙ্গিকৃস্‌ চর্চা করতে বলেননি ।”

চার অধায়ু , দু ১০৭

“শ্রীকৃঞ্চ তোমাকে হোলে কী বলতেন, অন্তু ?”

“অনেকদিন আগেই কানে কানে বলে রেখেছেন। সেই তার কানে-কানে কথাটাকে মুখ খুলে বলবার ভার ছিল আমার”পরে। নিবিবচারে সবারই একই কর্তৃব্য, গুরুমশায় কানে ধরে এই কথাটা বলতেই এত কৃত্রিমতার স্থষ্টি হয়েছে তোমাকে মুখের উপরই বলছি ওদের যে-পাডায় অহঙ্কার ক'রে নম্রতা করতে যাও সেখানে তোমারো জায়গা নেই দেবী! সবাই দেবী তোমরা ! নকল দেবীর কৃত্রিম সাজ, মেয়েদের অন্য সাজেরই মতো, পুরুষ দঞ্জির দোকানে বানানো |”

“দেখো! অস্ত, আজো বুঝতে পারিনে ে-পথ তোমার নয়, সে পথ থেকে কেন তুমি জোর করে ফিরে আসোনি ?” 1

“তাহোলে বলি। অনেক কথা জানতুম না অনেক কথ। ভাবিনি এই পথে প্রবেশ করবার ভাগে ।, একে একে এমন সব ছেলেকে কাছে দেখলুম, বয়সে যারা ছোটে। না হোলে যাদের পায়ের ধুলো! নিতুম। তারা চোখের সামনে কী দেখেছে, কী সয়েছে, কী অপমান হয়েছে তাদের, সে সব ছুর্বিবষহ কথা কোথাও প্রকাশ হবে না। এরি অসহ্য ব্যথায় আমাকে ক্ষেপিয়ে

১০৮ .. | চার অধ্যায়

তুলেছিল। বারবার মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছি, ভয়ে হার মান্ব না, গীড়নে হার মান্ৰ না, পাথরের দেয়ালে মাথা ঠুকে মরব তবু ভুড়ি মেরে উপেক্ষা করব সেই হাদয়হীন দেয়ালটাকে ।” |

“তারপরে কি তোমার মত বদলে গেল 1”

“শোনো আমার কথা শক্তিমানের. বিরুদ্ধে ষে লড়াই ঝরে, সে উপায়বিহীন হোলেও সে-ই শক্তি- মাচ্চনর সমকক্ষে দাড়ায়; তাতে তার সম্মান রক্ষা হয়। সেই সম্মানের অধিকার আমি কল্পনা করেছিলুম দিন যতই এগোতে থাকৃল চোখের সামনে দেখা গেল,-- অসাধারণ উচ্চ মনের ছেলে অল্পে অন্ধে মন্তুষ্যত্ব খোয়াতে, থাকল। এত বড়ো লোকসান আর কিছুই নেই। নিশ্চিত জানতুম আমার কথা হেসে উড়িয়ে দেবে, রেগে বিদ্রুপ করবে, তবু ওদের বলেছি অন্যায়ে অন্যায়- কারীর সমান হোলেও তাতে হার, পরাজয়ের আগে মরবার আগে প্রমাণ করে যেতে হবে আমরা ওদের চেয়ে মানবধন্ম্ে বড়ৌ-__নইলে এত বড়ো বলিষ্ঠের সঙ্গে এমনতরো হারের খেলা খেলছি কেন? নির্বব,দ্ধিতাঃ আাত্মঘাতের জন্যে ?--আমার কথা ওদের কেউ বোঝেনি, তা নয়। কিন্তু কত জনই বা!”

চার অধ্যায় ১০৯

“তখনো ওদের ছাড়লে না কেন ?”

«আর কি ছাড়তে পারি ? তখন যে শাস্তির নিষ্ঠুর জাল সম্পূর্ণ জড়িয়ে এসেছে ওদের চারদিকে ওদের ইতিহাস নিজে দেখলুম, বুঝতে পেরেছি ওদের মর্ম্াস্তিক বেদনা, সেইজন্যেই রাগইঈ করি আর ঘ্ৃণাই করি, তবু বিপন্নদের ত্যাগ করতে পারিনে। কিন্তু একটা কথা এইট অভিজ্ঞতায় সম্পূর্ণ বুঝেছি, গায়ের জোরে আমরা যাদের অত্যন্ত অসমকক্ষ তাদের সঙ্গে গায়ের জোরের মন্লযুদ্ধ করতে চেষ্টা করলে আস্তরিক ছুর্গীতি শোচনীয় হয়ে ওঠে রোগ সব শরীরেই ছুঃখের কিন্ত স্টীণ শরীরে মারাতআঝক। মনুষ্যত্বের অপমান করেও কিছুদিনের মতো জয়ডস্কা বাজিয়ে চলতে পারে তারা যাদের আছে বাহুবল, কিন্ত আমরা পারব না| আগা- গোড়া কলঙ্কে কালো হয়ে পরাভবের শেষসীমায় অধ্যা- তির অন্ধকারে মিশিয়ে যাব আমরা 1?

“কিছুকাল থেকে এই ভয়ঙ্কর ট্র্যাজেডির চেহারা আমার কাছেও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে অন্ত। গৌরবের আহ্বানে নেমেছিলেম কিন্তু লজ্জা বেড়ে উঠছে প্রতিদিন। এখন আমরা কী করতে পারি বলো | আমাকে |? |

১১০ চাঁর অধ্যায়

“সব মানুষের সামনেই ধর্ম্ক্ষেত্রে ধর্মযুদ্ধ আছে, সেখানে মুতো৷ বাপি তেন লোকত্রয়ং জিতং। কিন্তু অন্তত আমাদের ক-জনের জন্যে যাত্রায় সে ক্ষেত্রের পথ বন্ধ। এখানকার কন্মফল এখানেই নিঃশেষে চুকিয়ে দিয়ে যেতে হবে ।”

“দব বুঝতে পারছি, তবু অস্ত আমাদের দেশের কাজ নিয়ে কিছুদিন থেকে এমন কঠিন ধিক্কার দিয়ে তুমি কথা বলো, সে আমাকে বড়ো বাজে [৮

“তার কারণ কীসে কথা এখন আর মা বল্লেও হয়, সময় চলে গেছে”,

“তবু বলো ।”

“আমি আজ ত্বীকার করব তোমার কাছে_-তোমরা যাকে পেটি,য়ট বুলা মামি সেই পেটিয়ট নই) পেটি যটিজমের চেয়ে যা বড়ে। তাকে যারা সর্ব্বেচ্চে ন। মানে জাদের পেটিয়টিজম্‌ কুমীরের পিঠে চড়ে পার হবার খেয়। নৌকো। মিথ্যাচরণ, নীচতা, পরস্পরকে অবিশ্বাস ক্ষমতালাভের চক্রান্ত, গুপ্তচরবৃত্তি একদিন তাদের টেনে নিয়ে যাবে গাকের তলায়। আমি স্পষ্ট দেখুতে পাচ্চি। এই গর্তর ভিতরকার কুষ্রী জগতটার মধ্যে দিনরাত মিথ্যের বিষাক্ত হাওয়ায়

চার অধ্যায় . ১১১

কখনোই নিজের স্বভাবে সেই পৌরুষকে রক্ষা করতে, পারব না যাতে পৃথিবীতে কোনে বড়ো কাজ করতে,

পারা যায়।”

“আচ্ছা! অন্ত, তুমি যাকে আত্মঘাত বলো সেকি

কেবল আমাদেরি দেশে ?”

“তা বলিনে। দেশের আত্মাকে মেরে দেশের প্রাণ বাচিয়ে তোলা যায় এই ভয়ঙ্কর মিথ্যে কথা পৃথিবীনুদ্ধ

হ্যাশনালিষ্ট আজকাল পাশবগজ্জনে ঘোষণা ,ক'রতে

বসেছে, তার প্রতিবাদ আমার বুকের মধ্যে অসঙ্য

আবেগে গুম্রে গুম্রে উঠছে-_-এই কথ! সত্যভাষায় হয়তো বলতে পারতুম, স্ুরঙ্গের মধ্যে লুকোচুরি ক'রে দেশ উদ্ধার চেষ্টার চেয়ে সেটা হোতো৷ চিরকালের বড়ো!

কথা। কিন্তু জন্মের মতো! বলবার সময় হোলো! না।

আমার বেদনা তাই আজ এত নিষ্ঠুর হয়ে উঠছে” এল গভীর দীর্ঘনিশ্বাসু... ফেললে, বললে, “ফিরে এসো অন্ত 0২ “আর ফেরবার পথ নেই 1” «কেন নেই ?”

“অজায়গায় যদি এসে পড়ি সেখানকারও দায়িত্ব

আছে শেষ পধ্যন্ত।”

চি)

১১২ , চার অধ্যাযু

এল অতীনের গলা জড়িয়ে ধরে বললে, “ফিরে এসো, অস্ত। এত বছর ধরে যে বিশ্বাসের মধ্যে বাস! নিয়েছিলুম তাব ভিৎ তুমি ভেঙে দিয়েছ আজ আছি ভেসে-চলা ভাঙা নৌকে। জীকড়িয়ে। আমাকেও উদ্ধার করে নিয়ে যাও ।__অমন চুপ করে বসে থেকো না, বলো অন্ত, একটা কথা বলো এখনি তুমি হুকুম করো আমি ভাঙব পণ। ভূল করেছি আমি। আমাকে মাপ কুরে। 1৮

“উপায় নেই 1”

“কেন উপায় নেই ?, নিশ্চয় আছে

“তীর লক্ষ্য হারাতে পারে তৃণে ফিরতে পারে না।”

“আমি ন্বয়ন্বরা, আমাকে বিয়ে করো অন্ত আর সময় নষ্ট করতে পারব না-গান্ধব্ব বিবাহ হোক্‌, সহধম্মিণী করে নিয়ে যাও তোমার পথে ।”

বিঞদের পথ হোলে নিয়ে যেতুম সঙ্গে। কিন্তু

যেখানে ধন্ম নষ্ট হয়েছে সেখানে তোমাকে সহধম্মিণী

করতে পারব না।_-থাক্‌ থাক্‌ সব কথা থাকু।

জীবনের নৌকোডুবির অবসানে কিছু সত্য এখনো বাকি

আছে। তারি কথাটা শুনি তোমার মুখে ।” “কী বল্ব ?”

চার অধ্যায় " ১১৩

“বলো, ভূমি ভালোবেসেছ।”

“৷ বেসেছি 1”

“বলো, আমি তোমাকে ভালোবেসেছি সেকথ। (তোমার মনে থাকবে আমি যখন থাকব না তখনে1।”

এলা নিরুত্তরে চুপ করে বসে রইল, জল পড়তে লাগল ছুই চোখে অনেকক্ষণ পরে বাম্পরুদ্ধ গলায় বল্‌লে, “মাবার বলছি, অন্ত, কিছু নাও আমার হাত থেকে-নাও এই আমার গলার হার |” মা

এই ব'লে পায়ের উপর রাখল হার।

“কিছুতেই না।৮

“কেন, অভিমান ?”

“হা, অভিমান। এমন দ্রিন ছিল তখন যদি দিতে, পরতুম গলায়-আজ দিলে পকেটে, অন্নাভাবের গর্ত- টার মধ্যে ভিক্ষে নেব না তোমার কাছে 1”

এলা অতীনের পায়ের কাছে লুটিয়ে বল্লে, “নাও আমাকে তোমার সঙ্গিনী ক'বে।”

“লোভ দেখিয়ো না, এলা। অনেকবার বলেছি আমার পথ তোমার নয়?

“তবে দে পথ তোমারো নয় ফিরে এসো, ফিরে এসো”

১১৪ *. চার অধ্যায়

দপথ- আমার নয়, আমিই পথের। গলার ফাসকে গলার গয়ন! কেউ বলে না 1” |

“অন্ত, নিশ্চয় জেনো, ভুমি চলে গেলে এক মুহুর্ত আমি বাঁচব নাঁ। তুমি ছাড়া আর কেউ নেই আমার, কথায় আজ যদিবা সন্দেহ করো, একান্ত মনে আশা করি মৃত্যুর পরে সে সন্দেহ সম্পূর্ণ ঘোচাবার একট কোনো রাস্তা কোথাও আছে ।”

' হঠাৎ অতীন লাফিয়ে উঠে দ্াড়াল। তীরের মতো তীক্ষ হুইস্লের শব্দ এলো দূর থেকে। চমকে ঝলে উঠল, “চললুম 1”

এল তাকে জড়িয়ে ধরলে, বল্লে, “আর একটু থাকো |”

“না।”

“কোথায় যাচ্চ ?”

“কিচ্ছু জানিনে |”

এলা অতীনের পা*জড়িয়ে ধরে বল্লে “আমি তোমার সেবিকা, তোমার চরণের সেবিকা, আমাকে ফেলে যেয়োনা, ফেলে যেয়োন1 1৮

একটুক্ষণ থমূকে দাড়িয়ে রইল অতীন। দ্বিতীয়বার হুইস্লের শব এলো অতীন গঞ্জন করে বললে,

চার অধ্যায় মি | ' ১১৫

“ছেড়ে, দাও ।”--বলে নিজেকে ছিনিয়ে নিয়ে চলে গেল। |

তখন সন্ধার তন্ধকাঁর ঘনিয়ে এসেছে এলা মেঝের উপর উপুড় হয়ে পণড়ে। তার বুকের ভিতরট। শুকিয়ে গেছে, তার চোখে জল নেই এমন সময় গম্ভীর গলার ডাক শুনতে পেল, “এল 1”

চম্কে উঠে বস্ল। দেখলে ইলেক্টিক্‌ টর্চ হাতে ইন্দ্রনাথ। তখনি উঠে দাড়িয়ে বল্লে, “ফিরিয়ে আনুন অন্তরকে ।”

“মে কথা থাক্‌! এখানে কেন এলে ?”

“বিপদ আছে জেনেই এসেছি ।” |

তীব্র ভৎ্সনার সুরে ইন্দ্রনাথ রললেন, “তোমার বিপদের কথা কে ভাবছে? এখানকার খবর তোমাকে কে দিলে ?”

“টু 1

“তবু বুঝলে না মতলব ?” *

“বোঝবার বুদ্ধি আমার ছিল না। প্রাণ হ্ীপিয়ে উঠেছিল ।”

“তোমাকে মারতে পারলে এখনি মারতুম। যাও ঘরে ফিরে। ট্যাক্সি আছে বাইরে |”

১১৬ চার অধ্যায়

্জৃর্ অঞ্যান্

“আবার অখিল !-_পালিয়েছিস্‌ বোডিং থেকে! তোর সঙ্গে কোনোমতে পারবার জো নেই বারবার বলছি, বাড়িতে খবরদার আসিস্নে | মরবি যে!”

' অখিল কোনো উত্তর না দিয়ে গলার নুর নামিয়ে বললে, “একজন দাড়িওয়াল৷ কে পিছনের পাঁচিল টপকিয়ে বাগানে ঢুকল্‌। তাই তোমার ঘরে ভিতর 'থেকে দরজা বন্ধ ক'রে দিলুম।- শোনো পায়ের শব্দ 1৮ অখিল.তার ছুরির সব চেয়ে মোটা ফলাটা খুলে দাড়াল। |

এল! বললে, “ছুরি খুলতে হবে না তোমাকে, বীরগুরুষ। দে বলছি।” ওরহাত থেকে ছুরি কেড়ে নিলে।

সিঁড়ি থেকে আওয়াজ এলো, “ভয় নেই, আছি অন্ত ।?

মুহুর্তে এলার মুখ পাংশু বর্ণ হয়ে এলো--বললে, “দে দরজা খুলে ॥” |

চার অধ্যায় | '*.১১৭

দরজা খুলে দিয়ে অখিল জিজ্ঞাসা করলে, “সেই দাড়িওয়াল। কোথায় ?”

“দাড়ি নিশ্চয় পাওয়া যাবে বাগানে, বাকি মানুষটাকে পাবে এইখানেই যাও খোজ করো গে দাড়ির” অখিল চলে গেল।

এলা পাথরের মৃত্তির মতো ক্ষণকাল একদৃষ্টে চেয়ে দাড়িয়ে রইল বললে, “অস্ত, কী চেহারা তোমার ?”

আতীন বললে, “মনোহর নয় ।৮ |

“তবে কি সত্যি ?”

“কী সত্যি £”

«তোমাকে সব্বনেশে ব্যামোয় ধরেছে |”

নানা ডাক্তারের নান। মত, বিশ্বাস না করলেও চলে ।”

“নিশ্চয় তোমার খাওয়া হয়নি |”

“ও কথাটা থাকৃ। সময় নষ্ট কোরো না”

“কেন এলে, অন্ত, কেন এল? এরা যে তোমাকে ধরবার আপক্ষায় আছে ।”

“ওদের নিরাশ করতে চাইনে |”

অতীনের হাত চেপে ধরে এলা বললে, «কেন এলে এই নিশ্চিত বিপদের মধ্যে? এখন উপায় কী?”

১১৮ চার অধ্যায়

“কেন এলুম সেই কথাটা যাবার ঠিক আগেই বলে চলে যাব। ইতিমধ্যে যতক্ষণ পারি কথাটাই তুলে থাকতে চাই। নীচের দরজাগুলো বন্ধ করে দিয়ে আমি গে।”

খানিক পরে উপরে এসে বললে, “চলো ছাদে নীচের তলাকার আলোর বাল্ব্গুলো সব খুলে নিয়েছি। ভয় পেয়ো না ।”

' দুজনে ছাদে এসে ছাদে প্রবেশের দরজা বন্ধ করে দ্িলে। বদ্ধ দরজায় ঠেসান দিয়ে বসল অতীন, এলা বসল তার সাম্নে।

« «এলা, মন সহজ করো যেন কিছু হয়নি, যেন আমরা ঢুজনে আছি লঙ্কাকাণ্ড আরম্ভ হবার আগে সন্নরকাণ্ডে। তোমূর হাত অমন বরফের মতো ঠাণ্ডা কেন? কাপছে যে। দাও, গরম করে দিই ।”

এললার হাত দুখানি নিয়ে অতীন জামার নীচে বুকের উপর চেপে রাখলে ভ্রখন দূরের পাড়ায় বিয়েবাড়িতে সানাই বাজছে

“ভয় করছে, এলী ?”

“কিসের ভয় ?”

“সমস্ত কিছুর। প্রত্যেক মুহুর্তের

চার অধ্যায়] ১১৯

“ভয় তোমার জন্যে, অস্ত, আর কিছুর জন্যে নয়।”

অতীন বল্‌্লে, “এলী, মনে করতে চেষ্ট। করো আমরা আছিপঞ্চাশ কি একশে। বছর পরেকার এমনি এক নিস্তব্ধ রাতে উপস্থিতের গণ্তীটা নিতান্ত সঙ্কীর্ণ, তার মধ্যে ভয় ভাবন। ছুঃখ কষ্ট সমস্তই প্রকাণ্ততার ভান ক'রে দেখা দেয়। বর্তমান সেই নীচ পদার্থ যার ছোটে মুখে বড়ো কথা৷ ভয় দেখায় সে মুখোষ প'রে-_ যেন আমরা মুহুর্তের কোলে নাচানো শিশু মৃত্যু মুখোষখান] টান মেরে ফেলে দেয়। মৃত্যু অত্যুক্তি করে না। যা অত্যন্ত করে চেয়েছি তার গায়ে মোটা অঙ্কের দাম লেখা ছিল বর্তমানের কাকির কলমে, যা অত্যন্ত করে হারিয়েছি তার গায়ে ছুদিনের কালী লেবেল মেরে লিখেছে অপরিসীম দুঃখ মিথ্যে কথা! জীবনটা জালিয়াৎ, সে অনন্তকালের হস্তাক্ষর জাল ক'রে চালাতে চাষ। মৃত্যু এসে হাসে, বঞ্চনার দলিলটা লোগ্ করে দেয়। সেহাসি নিষ্ঠুর হাসিনয়, বিদ্রপের হাসি নয়, শিবের হাসির মতো সে শান্ত সুন্দর হাসি, মোহরাত্রির অবসানে এলী, রাত্রে একলা বসে কখনো মৃত্যুর

বিদ্ধ সুগভীর মুক্তি অনুভব করেছ, যার মধো চির- 'কালের ক্ষমা ?”

১২৩ চার অধ্যায়

«তোমার মতে বড়ো করে দেখবার শক্তি আমার নেই অন্ততবু তোমাদের কথা মনে ক'রে উদ্বেগে যখন অভিভূত হয়ে পড়ে মন,_তখন এই কথাটা খুব নিশ্চিত করে অনুভব করতে চেষ্টা করি যে মরা সহজ |”

“ভীরু, মৃত্যুকে পালাবার পথ ব'লে মনে করছ কেন? মৃতু সব চেয়ে নিশ্চিত জীবনের সব গতি- আ্রোতেরে চরম সমুদ্র, সন সত্য মিথ্যা! ভালো মন্দর নিঃশেষ সমন্বয় তার মধ্যে এইরাত্রে এখনি আমর! আছি সেই বিরাটের প্রসারিত বাছুর বেষ্টনে আমরা দজনে__মনে পড়ছে ইব সেনের চারিটি লাইন?

[00)8708

[10710105076 09,

[00105 006 581

19805 (110 ৮88 51161)00.

এলা অতীনের হাত কোলে নিয়ে বসে রইল স্তব্ধ হয়ে। হঠাৎ অতীন হেসে উঠল। বল্লে_“পিছনে মরণের কালোপর্দাখানা নিশ্চল টানা রয়েছে অসীমে, তারি উপর জীবনের কৌতুক নাট্য নেচে চল্ছে অস্তিম অঙ্কের দিকে। তারি একটা ছবি আজ দেখে চেয়ে

$

আজ তিন বছর আগে এই ছাদের উপর তু রি আমার জন্মদিনের উৎসব করেছিলে, মনে আছে ?” “খুব মনে আছে ।”

“তোমার ভক্ত ছেলের দল সবাই এসেছিল। ভোজের আয়োজন ঘট করে হয়'ন। টিড়ে ভেজেছিলে সঙ্গে ছিল কলাইনস্ুটি সিদ্ধ মরিচের গুঁড়ো ছিটানো ডিমের বডাও ছিল মনে পড়ছে। সবাই মিলে খেল কাড়াকাড়ি কারে। হঠাৎ মতিলাল হাত পা ছুড়ে সুরু করাল, আজ নবষুগে অতীন বাবুর নবজন্মের দিন__ আমি লাফ দিয়ে উঠে তার মুখ চেপে ধরলুম, বললুম, বক্তৃতা যদি করো, তবে তোমার পুরোনো জন্মের দিনটী এইখানেই কাবার বট বল্লে, ছী ছী অতীনবাবু, বক্তৃতার ভ্রণহত্যা 1--নব যুগ, নব জন্ম, মৃত্যুর তোরণ প্রভৃতি ওদের বাধা বুলিগুলো শুনলে আমার লজ্জা কারে। ওরা প্রাণপণে চেষ্টা করেছে আমার মনের উপর ওদের দলের তুলি বুল্লোতে,_ কিছুতে রং ধরল না।”

“অস্ত, নিব্বোধ আমি; আমিই ভেবেছিলুম তোমাকে মিলিয়ে নেব আমাদের সকল পদাতিকের সঙ্গে এক উদ্দি পরিয়ে

১২২ চার অধ্যায়

“তাই, আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে ওদের সঙ্গে ঘোরতর দিদিয়ানা করতে। ভেবেছিলে আমার সংশোধনের পক্ষে কিছু ঈধ্যার প্রয়োজন আছে। সনে যত্ব কুশল সম্ভাষণ বিশেষ মন্ত্রণা অনাবশ্যাক উদ্বেগ মণি- হারির রড়ীন সামগ্রীর মতো ওদের সামনে সাজিয়ে রেখেছিলে তোমার পসরায়। আজো তোমার করুণ প্রশ্ন কানে শুনতে পাচ্ছি, নন্দকুমার তোমার চোখমুখ লাল দেখছি কেন। বেচারা ভখলামানুষ, সতোর অনুরোধে মাথাধরা অন্বীকার করতে না করতে ছেঁড়া স্াকড়ার জলপটি এসে উপস্থিত। আমি যুদ্ধ তবু বুঝতুম এই অতি অমায়িক দিদিয়ানা তোমার অতি পবিত্র ভারতবর্ষের বিশেষ ফরমাসের | একেবারে আদর্শ স্বদেশী দিদিবৃত্তি।” |

“আঃচুপ করো, চুপ করো অন্ত?

“আমেক বাজে জিনিষের বাহুল্য ছিল সেদিন তোমার মধ্যে, অনেক, হাস্তকর ভড়ং--সে কথ তোমাকে মানতেই হবে।”

“মান্ছি, মান্ছি, একশোবার মান্ছি। তুমিই সে সমস্ত নিঃশেষে ঘুচিয়ে দিয়েছে। তবে আজ আবার অমন নিষ্ঠুর করে বল্ছ কেন ?”

চার অধ্যায় সু ১২৩

“কোন মনস্তাপে বল্ছি, শোনো | জীবিকা থেকে রষ্ট করেছ ঝ'লে সেদিন আমার কাছে মাপ চাইছিলে যথার্থ জীবনের পথ থেকে ভুষ্ট হয়েছি ভাথচ সেই সব্বনাশের পরিবর্তে যা দাবী করতে পারতুম তা মেটে নি। আমি ভেডেছি আমার স্বভাবকে, কুসংস্কারে অন্ধ তুমি ভাঙতে পারলে না তোমার পণকে যার মধ্যে সত্য ছিল না, এজন্যে মাপ চাওয়া কি বাহুল্য ছিল? জানি তুমি ভাবছ, এতটা কী করে সম্ভব হোলো

“ই] আন্ত, আমার বিশ্ময় কিছুতেই যায় না_জানিনে আমার এমন কী শক্তি ছিল 1”

“তুমি কী করে জানবে? তোমাদের শক্তি তোমাদের নিজের নয়, মহামায়ার। কী আশ্চর্য্য স্বর তোমার কণ্ঠে, আমার মনের অসীম আকাশে ধ্বনির নীহারিকা স্থ্টি করে আর তোমার এই হাত- খানি, আঙলগুলি, সত্য মিথ্যে সব কিছুর »পরে পরশমণি ছু'ইয়ে দিতে পারে জানিনে, কী মোহের বেগে, ধিক্কার দিতে দিতেই নিয়েছি স্থলিত জীবনের অসম্মান। ইতিহাসে পড়েছি এমন বিপত্তির কথা, কিন্তু আমার মতো বুদ্ধি-অভিমানীর মধ্যে এটা যে ঘটতে পারে কখনো তা ভাবতে পারতুম না। এবার জাল

১২৪ চার অধ্যায়

ছেড়বার সময় এলো, তাই আজ বলব তোমাকে সত্য কথা, যত কঠোর হোকৃ।”

“বলো, বলো, যা বলতে হয় বলো, দয়া কোরো না আমাকে। আমি নির্মম, নিজ্জীব, আমি মু তোমাকে বোঝবার শক্তি আমার কোনো কালে ছিল ন]। অতুলা যা তাই এসেছিল হাত বাড়িয়ে আমার কাছে, অযোগ্য আমি, মূল্য দিইনি। বহুভাগ্যের ধন চিরজন্মের মতো৷ চলে গেল। এর চেয়ে শাস্তি যদি থাকে, দাও শাস্তি ।”

“থাক্‌, থাক্‌, শাস্তির কৃথ|। ক্ষমা করব আমি। মৃত্য যে ক্ষমা করে সেই অসীম ক্ষমা। সেই জন্যে আজ এসেছি।”

“সেই জন্যে ?” |

“স্থা কেবলমাত্র সেইজান্যে

“নাই ক্ষমা জানাতে তুমি | কিন্তু কেন এলে এমন ক'রে বেড়া আগুনের মধ্যে? জানি, জানি, বাচবার ইচ্ছে নেই তোমার তা যদি হয় তা হোলে ক-টা দ্রিন কেবলমাত্র আমাকে দাও, দাও তোমার সেব! করবার শেষ অধিকার। পায়ে পড়ি তোমার ।”

“কী হবে সেবা ! ফুটো জীবনের ঘটে ঢাল্বে সুধা !

চার অধ্যায় পু ১২৫,

তুমি জানোনা, কী অসহ্া ক্ষোভ আমার! শুঞষা দিয়ে তার কী করতে পারো, যে-মান্থুষ আপন সত্য হারিয়েছে

“সত্য হারাওনি অস্ত। সত্য তোমার অন্তরে আছে অক্ষুপ্ন হয়ে!”

“হারিয়েছি, হারিয়েছি”

“বোলো না বোলো না অমন কথা 1”

“আমি যে কী যদি জানতে পারতে তোষার 'মাথ! থেকে পা৷ পধ্যন্ত শিউরে উঠত”

“অস্ত, আত্মনিন্দা বাড়িয়ে তুল্ছ কল্পনায়। নিষ্ষাম- ভাবে যা করেছ তার কলঙ্ক কখনোই লাগবে 'না তোমার স্বভাবে ।”

(৫স্বভাবকেই হত্যা! করেছি, সব হত্যার চেয়ে পাপ। কোনো অহিতকেই সমূলে মারতে পারিনি, সমূলে মেরেছি কেবল নিজেকে ।)সেই পাপে, আজ তোমাকে হাতে পেলেও তোমার সঙ্গে মিলতে পারব না| পাণি- গ্রহণ! এই হাত নিয়ে! কিন্তু কেন মব কথা ! সমস্ত কালো! দাগ মুছবে যমকন্যার কালো জলে, তারি কিনারায় এসে বসেছি। আজ বলা যাক যত সব হাল্কা কথা হাস্তে হাস্তে। সেই জন্মদিনের ইতি- বৃত্তটা শেষ করে দ্রিই। কী বলো এলী ?”

১২৬ চার অধ্যায়

“অস্ত, মন দিতে পারছিনে 1৮

“আমাদের ছুজনের জীবনে মন দেবার যোগ্য যা! কিছু আছে সে কেবল রকম গোটাকয়েক হাল্কা দিনের মধ্যে। ভোলবার যোগ্য ভারি ভারি দিনই তো বনুবিস্তর

“আচ্ছা, বলো অন্ত |”

“জন্মদিনের খাওয়া হয়ে গেল। হঠাৎ নীরদের সখ হোলো,পলাসীর যুদ্ধ আবৃত্তি করবে উঠে দাড়িয়ে হাত নেড়ে গিরীশ ঘোষের ভঙ্গীতে আউডিয়ে গেল £

_কোথা যাও ফিরে চাও সহত্র কিরণ,

« বারেক ফিরিয়া চ।ও ওগো দিনমণি ।__

নীরদ লোক ভালো, অত্যন্ত সাদাসিধে, কিন্তু নির্দয় তার স্মরণশক্তি ।, সভাটা ভেঙে ফেলবার জন্যে আমার মন যখন হন্যে হয়ে উঠেছে তখন ওরা ভবেশকে গান গাস্থতে অনুরোধ করলে। ভবেশ বল্লে, হান্মোনিয়ম সঙ্গে না থাকলে ই! করতে পারে না।- তোমার ঘরে পাপট! ছিল না। ফাড়া কাটুল। আশাম্বিত মনে ভাবছি এইবার উপসংহার, এমন সময় সতু খামকা তর্ক তুল্লে, মানুষ জন্মায় জন্মদিনে না জন্মতিথিতে ? যত বলি থামে! সে থামে না। তর্কের

চার অধ্যায়" | ১২

মধ্যে দেশাত্মবোধের ঝাঁজ লাগল, চড়তে লাগল গলার আওয়াজ, বন্ধুবিচ্ছেদ হয় আর কী বিষম রাগ হোলো। তোমার উপরে আমার জন্মদ্রিনকে একটা সামান্, উপলক্ষ্য করেছিলে, মহত্তর লক্ষ্য ছিল কন্মভাইদের একত্র করা।”

“কৌন্ট। লক্ষ্য কোন্ট! উপলক্ষ্য বাইরে থেকে বিচার কোরো না অস্ত শাস্তির যোগ্য আমি, কিন্ত, অন্যায় শাস্তির না। মনে নেই তোমার, সেইব্রকার জন্মদিনেই অতীন্দ্রবাকু আমার মুখে নাম নিলেন অন্ত ? সেটা তে। খুব ছোটো কথা নয়। তোমার অন্ত নামের ইতিহাসট1 বলো! শুনি ।” টু

“সখি, তবে শ্রবণ করো তখন বয়স আমার চার. পাঁচ বছর, মাথায় ছিলুম ছোটো, কথ! ছিল না মুখে, শুনেছি বোকার মতে। ছিল চোখের চাহনি জ্যাঠামশায় পশ্চিম থেকে এসে আমাকে প্রথম দেখলেন। কোলে তুলে নিলেন, বললেন, এই ফালখিল্যটার নাম অতীন্জ রেখেছে কে? অতিশয়োক্তি অলঙ্কার, এর নাম দাও. অনতীন্দ্র। সেই অনতি শব্দটা স্েহের কণ্ঠে অন্ত হয়ে দাড়িয়েছে তোমার কাছেও একদিন অতি হয়েছে, অনতি, ইচ্ছে ক'রে খুইয়েছে মান।”

১২৮ চার অধ্যায

হঠাৎ 'অতীন চমকে উঠে থেমে গেল। বললে, “পায়ের শব শুনছি যেন।”

এলা বল্‌্লে, “অখিল ।”

আওয়াজ এলো, “দিদিমণি |”

ছাদে আসবার দরজ1 খুলে দিয়ে এল৷ জিজ্ঞাসা করলে, “কী ।” |

অখিল বল্লে, “খাবার 1”

ঝড়িতে রান্নার ব্যবস্থা নেই অনুরবস্তী দিশী (রেস্টোরা থেকে বরাদ্ধমতে। খাবার দিয়ে যায়

এল। বল্‌্লে, “অস্ত, চলো খেতে |”

“খাওয়ার কথা বোলোনা। না খেয়ে মরতে মানু- ষের অনেকদিন লাগে। নইলে ভারতবর্ষ টি'কত না। ভাই অখিল, আর রাগ. রেখোনা মনে আমার ভাগটা তুমিই খেয়ে নাও। তারপরে পলায়নেন সমাপয়েৎ_- দৌড় 'দিঁয়ো যত পারো”

অখিল চলে গেল। *

দুজনে তাদের মেঝের উপর বসল। অতীন আবার স্থুরু করলে “সেদিনকার জন্মদিন চলতে লাগল একটানা, কেউ নড়বার নাম করে না। আমি ঘন ঘন ঘড়ি দেখছি, ওটা একট] ইঙ্গিত রাতকানাদের কাছে।

চার অধ্যায়. * | "* ১২৯

শেষকালে তোমাকে বললুম, সকাল সকাল তোমার শুতে যাওয়া উচিত, এই সেদিন ইন্ফুয়েগ্তা থেকে উঠেছ।-- প্রশ্ন উঠল, “ক-টা। বেজেছে ? উত্তর-_সাড়ে দশটা সভ1 ভাউবার ছুটো একটা হাইতোলা গড়ি- মসি-করা লক্ষণ দেখা গেল। বটু বল্‌্লে, বসে রইলেন যে অতীন বাকু ? চলুন এক সঙ্গে যাওয়া যাক্‌।_ কোথায়? না, মেথরদের বস্তিতে ; হঠাৎ গিয়ে পড়ে ওদের মদ খাওয়া বন্ধ করতে 'হবে ।-_সর্বশরীৰ জলে উঠল। বললুম, মদ তো বন্ধ করবে, তার ধদলে দেবে কী।__বিষয়ট! নিয়ে এতট। উত্তেজিত হবার দরকার ছিল না।_-ফল হোলো, যারা চলে যাচ্ছিল তারা দাড়িয়ে গেল। সুরু হোলো, আপনি কি তবে বলতে চাঁন-_তীব্রম্বরে ব'লে উঠলুম__কিছু বলতে চাইনে ।_ এতট। বেশি ঝাজও বেমানান হোলো গলা ভারি কারে তোমার দ্রিকে আধখানা চোখে চেয়ে বললুম__ তবে আজ আসি ।-_দা'ভলায় তোমার ঘরের সামনে পর্যন্ত এসে পা চলতে চায় নাঁ। কী বুদ্ধি হোলে! বুকের পকেট চাপড়িয়ে বললুম, ফাউন্টেন পেনটা বুঝি ফেলে এসেছি ! বটু বল্লেশমামিই খুঁজে আনছি__ ব'লেই দ্রুত চলে গেল ছাদে। পিছু পিছু ছুটলুম আমি।

১৩০ চার অধ্যায়

খানিকটা খৌজবার ভান ক'রে বটু ঈষৎ হেসে বল্লে,_ দেখুন তো বোধ করি পকেটেই আছে নিশ্চিত জানতুম আমার ফাউন্টেন পেনটা আবিষ্কার করতে হোলে ভূগোল সন্ধানের প্রয়োজন আমার নিজের বাসাতেই স্পষ্ট বলতে হোলো, এলাদির সঙ্গে বিশেষ কথা আছে বটু বল্লে, বেশ তো অপেক্ষা করছি।--আমি বললুম, অপেক্ষা করতে হবে না, যাও ।--বটু ঈষৎ হেসে বললে, রাগ করেন কেন অতীনবাবু, আমি চললুম।”

আবার পায়ের শব্দ শুনে অতীন চমকে উঠে থামল। অখিল এলো। ছাদে রললে,_-“কে একজন এই চিরকুট দিয়েছে অতীনবাবুকে। তাকে রাস্তায় দাড় করিয়ে রোখেছি।৮*

এলার বুক ধড়াসকরে উঠল, বললে “কে এলো ?”

অভীন বল্লে, “বাবুকে ঢুকতে দাও ঘরে ।” অখিল জোরের'সঙ্গে বল্‌্লে, “না, দেব না”

অতীন বল্লে, “জগ্ম নেই, বাবুকে তুমি চেনো, অনেকবার দেখেছ ।”

“না চিনিনে |”

“খুব চেনো আমি বলছি, ভয় নেই, আমি আছি ।৮

চার অধ্যায় *». ১৩১

এলা বললে, “মখিল, যা তুই মিথ্যে ভয় করিসনে।”

অখিল চলে গেল। ,

এলা জিজ্ঞাসা করলে, “ঝটু এসেছে নাকি?”

“না বটু নয়।”

“বলো না, কে এসেছে। আমার ভালো লাগছে না|?

“থাক সে কথা, যা! বলছিলুম বল্তে দাও ।”

“অন্ত, কিছুতেই মন দ্রিতে'পারছিনে 1

“এলা, শেষ করতে দাও আমার কাহিনী বেশি দেরি নেই ।__তুমি উঠে এলে ছাদে যুছুগন্ধ পেলুম রজনীগন্ধার। ফুলের গুচ্ছটি সবার কাছ থেক লুকিয়ে রেখেছিলে একলা আমার হাতে দেবে বলে। আমাদের সন্বন্ধের ক্ষেত্রে অন্তর জীবনলীলা স্বর হোলো এই লাজুক ফুলের গোপন অভার্থনায়, তার পর থেকে অতীন্দ্রনাথের বিদ্াবুদ্ধি গ্রান্তী্য ক্রমে ভ্রমে তলিয়ে গেল স্ততলম্পর্শ আত্মবিস্মৃতিতে সেইদিন প্রথম তুমি আমার গলা জড়িয়ে ধরলে, বললে, এই নাও জন্মদিনের উপহার_-সেই পেয়েছি প্রথম চুম্বন। আজ দাবী করতে এসেছি শেষ চুম্বনের |

১৩২ চার অধ্যায়

অখিল'এসে বললে, “বাবুটি দরজায় ধাক্কা মারতে সবক করেছে। ভাঙল বুঝি। বলছে, জরুরী কথা।”

“ভয় নেই অখিল, দরজা ভাঙবার আগেই তাকে ঠাণ্ডা করব। বাবুকে এখানেই অনাথ করে রেখে তুমি এখনি পালাও অন্য ঠিকানায় আমি আছি 'এলাদির খবর নিতে ।”

' এল্লা অখিলকে বুকের কাছে টেনে নিয়ে তার মাথায় চুমো খেয়ে বললে, “সোনা আমার, লক্ষ্মী আমার, ভাই আমার, তুই চলে যা। তোর জন্যে ক-খানা নোট আমার আঁচলে বেঁধে রেখেছি, তোর এলাদির 'আশী্বাদ। আমার পা ছুয়ে বল্‌, এখনি তুই যাবি, দেরি করবিনে 1৮.

অতীন বললে, “অখিল, আমার একটি পরামর্শ তোমাকে শুনতেই হবে। যদি তোমাকে কখনো কোনো প্রশ্ন কেউ জিজ্ঞাসা করে তুমি ঠিক কথাই বল্বে। বোলো এই রাত এগারোটার সময় আমিই তোমাকে জোর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি। চলো কথাটাকে সত্য করে আসি।”

এলা আর একবার অখিলকে কাছে টেনে নিয়ে

চার অধ্যায় ১৩৩

বল্লে, “আমার জন্যে ভাবিস্নে, ভাই। তোর অন্ত-দ! রইল, কোনে! ভয় নেই ।”

অখিলকে যখন ঠেলে নিয়ে অতীন চলছে এল! বল্লে,_“আমিও যাই তোমার সঙ্গে অস্ত।%

আদেশের স্বরে অতীন বল্লে, “না, কিছুতেই না।৮

ছাদের ছোটে পাঁচিলটার উপর বুক চেপে ধরে এল ধ্লীড়িয়ে রইল-__কণ্ঠের কাছে গুম্রে গুম্রে উঠতে লাগল কান্না, বুঝলে আজ রাত্রে ওর কাছ থেকে চির- কালের মতো অখিল গেল চলে ।-- |

ফিরে এল অতীন। এল! জিজ্ঞাসা করলে, “কী হোলো, অস্ত ?”

অতীন বললে “অখিল গেছে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছি ।৮

আর সেই লোকটি ?”

“ত[কেও দিয়েছি ছেড়ে। সে বসে বসে ভাবছিল কাজ ফাঁকি দ্রিয়ে আমি বুঝি কেবল গল্পই করছি। যেন নতুন একটা আরব্য উপন্যাস সুরু হয়েছে। আরব্য উপন্যাসই বটে, সমস্তটাই গল্প, একেবাবেই আজগবি গল্প। ভয় করছে এলা ? আমাকে ভয় নেই তোমার ?”

“তোমাকে ভয়, কী যে বলো 1”

১৩৪ চার অধ্যায়

“কী না করতে পারি আমি! পড়েছি পতনের শেষ সীমায়। সেদিন আমাদের দল অনাথা বিধবার সর্ধবন্ লুঠ করে এনেছে মন্মথ ছিল বুড়ির গ্রাম- সম্পর্কে চেনা! লোক-_খবর দিয়ে পথ দেখিয়ে সে-ই এনেছে দলকে ছদ্মবেশের মধ্যেও বিধবা তাকে চিনতে পেরে বলে উঠ্ল”মনু, বাবা তুই এমন কাজ করতে পারলি? তারপরে বুড়িকে আর বাচতে দিলৈ*্না যাকে বলি দেশের প্রয়োজন সেই আত্ম- ধন্মনাশের প্রয়োজনে টাকাটা এই হাত দিয়েই পৌচেছে যথাস্থানে আমার উপবাস ভেডেছি সেই টাকাতেই। এতদিন পরে যথার্থ দাগী হয়েছি চোরের কলঙ্কে, চোরাই মাল ছু'য়েছি, ভোগ করেছি। চোর অতীন্দ্রের নাম বটু ফাস.করে দিয়েছে পাছে প্রমাণা- ভাবে শাস্তি না পাই বা অল্প শাস্তি পাই সেইজন্য পুলিশ স্ুপারিন্টেণ্ডেন্টের মারফৎ সে মকর্দিমা ইংরেজ ম্যাজিষ্টরেটের আদালতে দ্রায়ের না হয়ে যাতে বাঙালী জয়ন্ত হাজরার এজলাসে ওঠে কমিশনরের কাছ থেকে সেই হুকুম আনাবে বলে মন্ত্রণা করে রেখেছে সে নিশ্চিত জানে, কাল ধরা পড়বই। ইতিমধ্যে ভয় কোরো আমাকে, আমি নিজে